বাজিস-১ : বরগুনার সাগর-নদীতে ইলিশ কম : জেলেরা আশাবাদী

197

বাজিস-১
বরগুনা- ইলিশ
বরগুনার সাগর-নদীতে ইলিশ কম : জেলেরা আশাবাদী
বরগুনা, ২৯ জুন, ২০১৮ (বাসস) : ইলিশের দেখা পাবার আশায় মসজিদ-মন্দিরে দোয়া প্রার্থনার পরে বরগুনা উপকূলের জেলেরা সাগরে ও নদীতে ইলিশের জাল ফেলছেন। তবে ইলিশের ‘ভরা মৌসুম’ মধ্য আষাঢ়েও সাগর বা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে কম। তবে তাদের আশাবাদ, যে কোন মুহূর্তেই ভাগ্য খুলবে। ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়বে জালে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগরে প্রায় সারা বছরই কম বেশি ইলিশ ধরা পড়লেও মুলতঃ জুন মাস থেকেই ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়। আর এ সময় ইলিশের সাইজও বড় থাকে। এ সময়টাতে জেলে পাড়ায় থাকে চরম ব্যস্ততা। ইলিশের প্রাচুর্যে পুরো উপকূল জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। সারা বছরের মধ্যে এই মৌসুমেই সাধারণত জেলেদের ঘরে সচ্ছলতা থাকে । ইলিশ বিক্রি করেই তারা দাদন-ঋণ পরিশোধ করেন। জেলে পল্লীর জেলেরা এই মৌসুমের জন্যই অধীর অপেক্ষায় থাকেন।
ইলিশের মোকাম বলে খ্যাত বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য বন্দরের মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী বাজার কেন্দ্রে জেলে আড়ৎদারও মহাজনদের ব্যস্ততা এ সময়টাতে বাড়বে। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী বাজার কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে যেখানে প্রায় ৮ কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর বাণিজ্য শুরুই হয়নি । জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়া শুরু করলে বিএফডিসি’র চিত্রই পাল্টে যাবে।
জেলার পায়রা ও বিষখালী নদীতে কম হলেও জেলেরা ইলিশ দেখা পাচ্ছেন। গুলিশাখালী গ্রামের জেলে ইব্রাহীম বলেন, ‘নদীতে দু একটা করে মাছ মিলছে। বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছি। প্রতিদিন জাল পাতছি। ইলিশের বিষয়টি হঠাৎ করেই শুরু হয়।’
আমতলী উপজেলার উপকূলীয় সকিনা এলাকার বয়স্ক জেলে আ. রহমান জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই ৫ মাসকে বলা হয় মাছের ‘ভরা মৌসুম’। এ সময়টাতে গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলে আসে সাগর মোহনা ও নদীগুলোতে। অনেক সময়ে দেরীতেও মৌসুম শুরু হয়। পাথরঘাটার টেংরা গ্রামের প্রান্তিক জেলে ইউনুস আলী হাওলাদার ও নিশানবাড়িয়া গ্রামের আবু হানিফ অনেক দিন পরে সোমবার বিকেলে ৫ টি ইলিশ মাছ বিক্রি করে ৬ হাজার টাকা পেয়েছেন। তারা বলেন, যে কোন সময়েই ভাগ্যের চাকা ঘুরেতে শুরু করবে।
তালতলীর মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি ও নিশানবাড়িয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী জানান, ‘তালতলী উপকূলে দুই শতাধিক জেলে ট্রলার ও নৌকার জেলে-মাঝিরা মাছ পাবার আশায় জাল পেতে যাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপকূলে জুড়ে এ বছর বেশ গরম পড়ছে। এর ফলে প্রায়শই নি¤œচাপ-লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকে। শুক্রবার জুমার নামাজের পরে বরগুনা, আমতলী ও পাথরঘাটার একাধিক মসজিদে মাছের জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে। ’ বরগুনা জেলা ট্রলারমালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৃত পক্ষে ইলিশ প্রকৃতির দান, প্রকৃতিই জানে ইলিশ কখন বেশী পাওয়া যাবে।’ তার মতে এই মৌসুমেই ইলিশ বেশী পাওয়া যাবার কথা।
পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর ছাড়াও কলাপাড়ার আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালী, মৌডুবি, ফেলাবুনিয়া আমতলীর তালতলী, জয়ালভাঙ্গা, ফকিরহাটে কয়েক শ’ ইলিশের আড়ৎ রয়েছে। সমুদ্রে জেলে ট্রলারগুলো আসা-যাওয়া শুরু করায় তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইলিশ সরবরাহ কম থাকায় স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছোঁয়া। বরগুনার বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ ১৬ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ মন্ডল জানিয়েছেন, ‘উপকূলীয় এলাকার মাছের চাহিদার শতকরা ৭৫ ভাগ আসে বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে। ১৮ ভাগ পূরন হয় নদী থেকে। যেহেতু ইলিশ প্রজননের সময়ে কড়াকড়িভাবে নদী ও সাগর মোহনায় জাটকা সংরক্ষণ করার হয়েছে তাই এ বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করি।’
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী জানান, বর্তমানে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পরলেও ভবিষ্যতে পরবে বলে আশা করা যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এ সময়টাতে ইলিশ কম পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ইলিশের পরিমাণ বেড়ে যায়।
বাসস/ সংবাদদাতা/১১৪০/মরপা