বাসস দেশ-৪ : টেকসই পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে হবে : বীর বাহাদুর উশৈসিং

170

বাসস দেশ-৪
পার্বত্যমন্ত্রী-এইচকেএইচ-রিপোর্ট
টেকসই পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে হবে : বীর বাহাদুর উশৈসিং
ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে আমাদেরকে পাহাড় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে হবে। পাহাড় জুড়ে বৃক্ষায়ন-বনায়ন, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ স্থাপন, পাহাড় ধস রোধে গাইড ওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ বেষ্টনি গড়ে তোলাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পাহাড়ী সম্পদ রয়েছে এবং এগুলো রক্ষা করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ ‘দি হিন্দু কুশ হিমালায় (এইচকেএইচ) অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট এন্ড এইচকেএইচ কল টু এ্যাকশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইসিআইএমওডি-এর বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য মো. মেসবাহুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। এতে আইসিআইএমওডি-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল একলাবিয়া শর্মা ‘এইচকেএইচ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট এবং এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়’ তুলে ধরেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এন বি কে ত্রিপুরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর হতে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অনগ্রসর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আত্ম-কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, উদ্বাস্তু পুর্নবাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে ১০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যুবকদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, যুব প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, কম্পিউটার সামগ্রী বিতরণ, আইটি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হয়েছে।
মন্ত্রী এ সময় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির বর্ণনা করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজারটি পাড়া কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, মিশ্রফল চাষ প্রকল্প ও ১০ হাজার ৮৯০টি পরিবারের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৪৫ হাজার পরিবারের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা করা সম্ভব হলে পুরো পাহাড় এলাকায় কেউ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকবে না।
বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ১ হাজার ৩’শ টি গাভী বিতরণ, চারটি আবাসিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পানীয় জলের উৎস ও নলকূপ স্থাপন প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও তিন পার্বত্য অঞ্চলের সকল মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আজকের এই রিসার্চের আলোচনায় দি হিন্দু কুশ হিমালয় (এইচকেএইচ) অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে ভবিষ্যতে দুই বিলিয়ন মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয় ও উপায়সমূহ উঠে এসেছে। হিন্দু কুশ হিমালয় অঞ্চলে পাহাড়ের পরিবেশ রাখতে ও জীবিকা নির্বাহের জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। এটি আফগানিস্তান থেকে মায়ানমার পর্যন্ত আটটি দেশের ওপর সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এবং ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশ পাড় হয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখর, অনন্য সংস্কৃতি, বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের একটি বিশাল রিজার্ভ এ অঞ্চলে রয়েছে। এখানে দেখা গেছে, দি হিন্দু কুশ হিমালয় (এইচকেএইচ) পাহাড় এবং পর্বতমালার মধ্যে বসবাসকারী ২৪০ মিলিয়নেরও বেশী মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য সরাসরি এর উপর নির্ভরশীল এবং এ অঞ্চলে বসবাসকারী ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মানুষের জীবন যাত্রা বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এই অঞ্চলে ১০টি প্রধান এশিয়ান নদীর উৎস হিসেবে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন মানুষকে প্রয়োজনীয় সম্পদ, বিশেষত পানি এবং জীব বৈচিত্র্য সরবরাহ করে থাকে। এ অঞ্চল এশিয়ার শস্য ঝুড়ি হিসেবে কাজ করে বলে আলোচনায় উঠে আসে। হিন্দু কুশ হিমালায়ান মনিটরিং এন্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (এইচআইএমএপি), আইসিআইএমওডি-এর সমন্বিত একটি দীর্ঘ মেয়াদী, বিজ্ঞান নীতি বিষয়ক একটি সমন্বিত উদ্যোগ।
বাসস/এএসজি/এমএন/১৪৪০/-এমএবি