গাভী পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে শামীম

399

জয়পুরহাট, ২৩ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : সারা বছরেও যেখানে ভাগ্যে জুটত না এক টুকরা গো মাংস , সেখানে তিন বছরের মাথায় গাভী পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে শামীম আহমেদ, নাম লিখেছেন সফল উদ্যোক্তার খাতায়। তার বাড়ি কালাই উপজেলার আহমেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা মন্ডলপাড়া গ্রামে। জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের হাঁস-মুরগী ও গাভী পালন প্রশিক্ষণ সফল উদ্যোক্তা হতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
পিতা রফিকুল ইসলাম ও মা শেফালী বেগমের সংসারে এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় শামীম। সংসারে অভাবের কারণে খেয়ে না খেয়ে বড় হতে হয় শামীমকে । কালাই থেকে সাইকেলে ১৭/১৮ কিলোমিটার দূরত্বে জয়পুরহাট সরকারি কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বন্ধু শিহাব আহমেদের মাধ্যমে যুব উন্নয়নের গবাদি পশু পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণের খবর পায় শামীম। প্রশিক্ষণ শেষে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ ৬০ হাজার নিয়ে প্রথমে মুরগী পালন শুরু করলেও পরবর্তিতে ৫ টি গাভী কিনে শুরু করেন গাভী পালনও। বর্তমানে শামীমের খামারে ৩৬ টি গাভী রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। জয়পুরহাট সরকারি কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি গাভী পালনের পাশাপাশি ঘাঁস চাষ, পেয়ারা বাগান ও ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে প্রতি মাসে আয় করছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। যুব উন্নয়নের খাতায় থাকা অন্যান্য সফল উদ্যোক্তার সঙ্গে নাম ওঠে শামীমেরও। এলাকায় শামীম এখন সকলের কাছে একজন সফল আত্মকর্মী। সে জিরো থেকে হিরো। মুরগীর সেডে বর্তমানে সোনালী জাতের মুরগী রয়েছে ৫ হাজার । যার মূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। খামারে থাকা গাভী গুলোর মধ্যে ৮ টি বর্তমানে দুধ দিচ্ছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৬০/৬৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাজার থেকে ছোট গরু কিনে মোটাতাজা করে ৩/৪ মাস পর বিক্রি করে থাকে। আবার ২৭ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন থাই পেয়ারা বাগান ও ভার্মি কম্পোষ্ট। শামীমের খামার ও বাগানে এখন কাজ করে ৩ জন কর্মচারী। শামীম আহমেদ জানায়, বছর পাঁচেক আগে এক টুকরা গরুর মাংস খাওয়া ভাগ্যে জোটেনি। সেখানে এবার কোরবানী দিয়েছি একটি গরু, একটি খাসি। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কালাই শাখা থেকে গ্রহণ করা ৫ লাখ টাকা ঋণসহ বর্তমানে শামীমের মূলধনের পরিমান হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন শামীম আহমেদ। ঢাকাতে আয়োজিত ’ যুব সমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট যথেষ্ট এর পক্ষে একক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শামীম। জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতায়ও সে প্রথম স্থান অর্জন করে। স্বপ্ন ছিল নিজে থেকেই কিছু করার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে শামীমের। জয়পুরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৩ মাস মেয়াদী মৎস্য, কৃষি , প্রাথমিক চিকিৎসা, গবাদিপশু পালন ও পোল্ট্রি প্রশিক্ষণ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয় বলে জানান শামীম আহমেদ। কয়েক শতাংশ জমির উপর বাড়ি ছাড়া বাবার কিছুই ছিল না। সেখানে সফল উদ্যোক্তা হয়ে এখন তিন বিঘা জমিও ক্রয় করেছে শামীম। এতকিছু করার পরেও নিজে এমবিএ পাস করে বোন আয়শা আকতার শেলী কেও ডিগ্রি পাস করিয়েছে শামীম। জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, এটি দেখিয়ে দিয়েছে শামীম। সে যুব উন্নয়ন থেকে আয় বর্ধন মূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে জিরো থেকে হিরো বানিয়েছে। শামীমকে দেখে ওই এলাকার অনেক যুবক সরকারের আয় বর্ধন মূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসছে।