বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সব দাবি মেনে নেয়ার পরও বুয়েটে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

123

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-শ্রমিক লীগ-ভাষণ
সব দাবি মেনে নেয়ার পরও বুয়েটে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

জিয়া, খালেদা জিয়া এবং এরশাদ আমলে একের পর এক ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি, কেবল আওয়ামী লীগই বিচার করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে ছাত্রদলের টগর ও মুকী গ্রুপের সংঘর্ষে সাবেকুন্নাহর সনি নিহত হলো তখন কে প্রতিবাদ করেছে। বুয়েটের অ্যালুমনাই এসোসিয়েশন তারাও নামে নাই, তাদেরও তো কথা বলতে বা কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তিনি বলেন, হ্যাঁ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবার কথা বলার অধিকার আছে, বলতে পারে। অন্তত সেই সুযোগটা আছে। কিন্তু যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিল-জাতির পিতা খুনীদের পুরস্কৃত করেছে, যুদ্ধাপরাধী এবং সাত খুনের আসামীকে ছেড়ে দিয়েছে- তার কে প্রতিবাদ করেছে। তখন মানবাধিকারের চিন্তা কোথায় ছিল। তখন ন্যায়-নীতিবোধ কোথায় ছিল? তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা।
শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এ সময় সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে লেখাপড়া শিক্ষা হবে, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মত উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই দেশকে জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা একে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা পেয়েছিল এটুকু বলতে পারি গত ১০ বছরের শাসনে সে সম্মান আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’ তাঁর সরকারের সময়ে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা গড়ে তোলায় নারীরা চলমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে যেন মেলে ধরতে পারে- বর্তমান সরকার তার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বিকাশ আজ বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খেলাধূলায় ও আমাদের মেয়েরা কম যাচ্ছে না। ১৫ বছর বয়েসিদের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় তারা ভাল করছে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাচ্ছে খেলাধূলা ও এবং লেখাপড়ায় আমাদের ছেলেদের ধেকে মেয়েরাই এগিয়ে রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজকে পাল্টে ফেলে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আর সুযোগ পেলে আমাদের নারীরা যে তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারে সেটা আজকে প্রমাণিত সত্য।’
সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন সহ পেশাগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সাফল্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থানটা যে জায়গায় জাতির পিতা নিতে চেয়েছিলেন সেটা আমরা করতে পেরেছি।’ প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী রাসুল মুহাম্মদ (সা:) স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা:) প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন,‘ বিবি খাদিজা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এবং এজন্য উঠের পিঠে চড়ে বিভিন্ন দেশে যেতেন। কাজেই নারীদের ধর্মের নামে ঘরে আটকে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী এ দিন প্রতিবেশি দেশ ভারতের একটি অঞ্চলের পানিয় জলের অভাব পূরণে সীমান্তবর্তী ফেনী নদী থেকে সামান্য পরিমাণ ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রদানের এবং আমদানি করা এলপিজি থেকে বাল্ক এলপিজি ত্রিপুরায় রপ্তানী করে রপ্তানী পণ্যের পরিমান বৃদ্ধি সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে এর অহেতুক সমালোচকদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, অতীতের জিয়া, খালেদা এবং এরশাদ সরকার মুখে সমালোচনা আর তলে তলে অতি ভারত তোষণ নীতি চালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের থেকে যদি কেউ ন্যায্য হিস্যা আদায় আদায় করতে পারে তবে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।’ এ বিষয়ে তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি, স্থল সীমানা চুক্তি করে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় এবং সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘লাভ-ক্ষতির হিসেব করলে এখানে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি। কাজেই মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জেনে শুনেই জ্ঞান পাপীরা কথা বলে যাচ্ছেন।’
যারা বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালেও বিএনপি ৩২টি আসন পেয়েছিল। আর ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছিল বলে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কাজেই বিগত নির্বাচনে তারা যে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন সেটা সত্য হলে তারাওতো আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দিত। যেটা তারা পারেননি।
তিনি বলেন, ‘তারা পারবে কিভাবে, তারাতো নির্বাচনটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে নিয়ে প্রতিটি আসন তিনজনের কাছে বিক্রি করেছে। কেউ লন্ডন থেকে টাকা খেয়েছে, কেউ গুলশান অফিস আবার কেউ পল্টন অফিস থেকে টাকা খেয়েছে।’ ‘যারা অবৈধ সামরিক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং সকল সময় অনির্বাচিত সরকরের তাবেদার এবং তাদের দয়ায় সরকারে ছিলেন,দুর্নীতির দায়ে সাাজা ভোগ করেছেন, তারা আবার নির্বচিন নিয়ে কথা বলেন কিভাবে’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পরিশেষে- নারী অধিকার রক্ষা করা এবং সমাজে নারীদের আপনস্থান তৈরি করে নেয়া, সেটা নারীদেরই করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ রবীন্দ্রনাথ যে বলে গিয়েছিলেন-নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার, হে বিধাতা। সে কথা আমরা আর বলতে চাই না।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৫৫/কেএমকে