১০ বছরে প্রথমবারের মত ইউরো বাছাই পর্বে ইংল্যান্ডের পরাজয়

150

প্রাগ, ১২ অক্টোবর ২০১৯ (বাসস) : এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত চেক রিপাবলিকের কাছে ২-১ গোলের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। আর এই পরাজয়ের মাধ্যমে ১০ বছরে প্রথমবারের মত ইউরো বাছাইপর্বে হারের তিক্ত স্বাদ পেল ইংলিশরা। ম্যাচ শেষে তাই ইংল্যান্ডের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট স্বীকার করেছেন বিশ্বের শীর্ষ দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে এখনো অনেক পথ বাকি আছে তাদের।
প্রাগের সিনোবো স্টেডিয়ামে জিততে পারলেই ইউরো ২০২০-র চূড়ান্ত পর্বের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যেত থ্রি লায়ন্সদের। হ্যারি কেনের পেনাল্টিতে ম্যাচের শুরুটাও দারুণ হয়েছিল। যদিও জ্যাকুব ব্রাবেকের গোলে দ্রুতই সমতায় ফিরে চেকরা। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে বদলী খেলোয়াড় জেদেনেক ওন্ড্রাসেকের গোলে ৪৪ ম্যাচ পরে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা পেল ইংলিশরা। ২০০৯ সালে ইউক্রেনের কাছে সর্বশেষ ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল ইংল্যান্ড।
ম্যাচ শেষে হতাশ সাউথগেট বলেছেন, ‘অবশ্যই এই ধরনের একটি রাতের অংশ আমরা হতে চাইনি। এটাই সত্যি যে আমরা যথেষ্ট ভাল খেলতে পারিনি। সবসময়ই আমাদের দেখে মনে হয়েছে একটি শীর্ষ দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার থেকে আমরা দূরে রয়েছি। আজকের রাতটাও তার ব্যতিক্রম নয়।’
যদিও পাঁচ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চেকদের থেকে হেড-টু-হেড রেকর্ডে এগিয়ে ইংল্যান্ড এখনো গ্রুপ-এ’র শীর্ষ দল হিসেবেই অবস্থান করছে। সমান ১২ পয়েন্ট পাওয়া চেকরা অবশ্য একটি ম্যাচ বেশী খেলেছে। তবে চূড়ান্ত পর্বে যেতে হলে শেষ তিনটি ম্যাচে নিজেদের সেভাবেই প্রমান করতে হবে। পরবর্তী ম্যাচে সোমবার বুলগেরিয়ার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
সাউথগেট আরো বলেছেন, ‘বাছাইপর্বে পরীক্ষার কিছু নেই, এখানে ব্যতিক্রম কিছু ঘটলেই বিদায় নিতে হবে। আশা করছি পরবর্তী ম্যাচগুলোতে নিজেদের মেলে ধরতে পারবো। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের প্রতিক্রিয়া দেয়ার নামই ফুটবল। পুরো ম্যাচে আমরা এটাই করে দেখাতে পারিনি। কেউ এটা পছন্দ না করলেও এটাই বাস্তবতা।’
প্রথম চারটি বাছাইপর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ড ১৯ গোল দিয়েছিল। এর মধ্যে মার্চে এই চেক রিপাবলিককেই ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সাউথগেট শিষ্যরা। ম্যাচ শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে সফরকারীরা যখন এগিয়ে গিয়েছিল তখন আরো একটি সহজ জয়ের আশাই করা হয়েছিল। ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড রাহিম স্টার্লিং চেক রক্ষনভাগকে কাটিয়ে বক্সের ভিতর ঢুকে পড়লে লুকাস মাসোপাস্টের ফাউলের শিকার হন। স্লোভেনিয়ান রেফারি ডামির স্কোভিনা পেনাল্টির নির্দেশ দিতে দেরী করেননি। স্পট কিক থেকে ক্যারিয়ারের ২৭তম আন্তর্জাতিক গোল সম্পন্ন করেন কেন। এক গোলে এগিয়ে থেকে বাছাইপর্বের আগের ম্যাচগুলোতেও ইংল্যান্ড ইউরো ২০২০’এ নিজেদের ফেবারিট প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে। আক্রমণভাগে প্রতিভাবানদের প্রাচুর্য থাকলেও রক্ষণভাগের দূর্বলতা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই চোখে পড়েছে। কেন বলেছেন এটা দলের জন্য অবশ্যই একটি সতর্কবার্তা। গ্রুপে এখনো ইংল্যান্ড শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যে কারণে অস্থির হবার কিছু নেই। এই ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪৪তম স্থানে থাকা চেক রিপাবলিক ম্যাচের চার মিনিটের মধ্যেই সমতা ফেরাতে সক্ষম হয়। দুইবার ইংলিশ রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে তারা গোল আদায় করে নেয়। ওনড্রেজ সেলুস্টকার হেডের পর ফিরতি বলে ব্রাবেক স্বাগতিকদের হয়ে সমতা ফেরান। চেলসির হয়ে দারুণভাবে মৌসুম শুরু করার পুরস্কার হিসেবে সাউথগেট মেসন মাউন্টকে প্রথমবারের মত মূল একাদশে সুযোগ দিয়েছিলেন। তবে মধ্যমাঠে মাউন্ট কিছুটা উপরে উঠে খেলার কারনে জর্ডান হেন্ডারসন ও ডিক্লান রাইসকে নীচে নামতে হয়েছিল। আর সেই সুযোগে চেকরা বারবার বলের পজিশন নিজেদের করে নিচ্ছিল। সাউথগেট বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে বল ছাড়া নিজেদের পজিশনগুলোর প্রতি আমাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। পুরো সপ্তাহ জুড়েই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আজকেও এই জায়গায় আমরা ব্যর্থ ছিলাম।’
মধ্য বিরতিতে সাউথগেটের সামনে সুযোগ ছিল মধ্যমাঠকে ঢেলে সাজানোর। বিরতির পরপরই স্টার্লিং ও কেনকে
রুখে দেন চেক গোলরক্ষক টমাস ভাক্লিক। কাউন্টার এ্যাটাকর থেকে জর্ডান পিকফোর্ডও দু’বার চেকদের হতাশ করেন। তবে ৮৫ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। মাসোপাস্টের ক্রস থেকে ওন্ড্রাসেক গোল করে চেকদের দারুণ এক জয় উপহার দেন।