আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী মাসে বিশেষ ব্যবস্থা : অর্থমন্ত্রী

836

সংসদ ভবন, ২৭ জুন, ২০১৮ (বাসস) : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী মাসে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
আজ সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে নানা কথা উঠেছে এবং আমার বিরুদ্ধে এক ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করা হয়েছে। আমি স্বীকার করি যে, সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা সকলের প্রত্যাশার পর্যায়ে নেই এবং এগুলোর মূলধন আমরা পুনর্ভরণ করে যাচ্ছি। তারা অনেক সময়ই বাণিজ্যিক বিবেচনায় লেনদেন করতে পারে না। যেমন- সরকারের হুকুমে তাদের বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ঋণ দিতে হয়। ব্যক্তিমালিকানা খাতের ব্যাংকগুলো সম্বন্ধে বলা হচ্ছে যে, সেগুলোতে লুটপাট হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানা খাতের একটি সমস্যা হচ্ছে যে, সেখানে বিভিন্ন ব্যাংক একে অন্যকে সাহায্য করে এবং এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের ঋণ পেয়ে থাকেন। এ সম্বন্ধে আগামী মাসে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’
প্রস্তাবিত বাজেটকে তাঁর বারোটি বাজেটের শ্রেষ্ঠতম বাজেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবাবলীর যথাযথ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন ছাড়া কেবল সমালোচনার খাতিরে কেউ কেউ গতানুগতিক সমালোচনা করেন। বাজেটের আয়তন বাড়লে রাষ্ট্র নানা ধরনের সেবা দিতে সক্ষম হয়।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বেসরকারি খাতের বিকাশ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, কৃষিখাতে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে কর কাঠামো সংস্কার, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আয় হস্তান্তর কৌশল প্রয়োগ করার কথা বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়। এ সব নীতি-কৌশল এবং তার সাথে সম্পৃক্ত খাতভিত্তিক বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। দেশের আর্থ-সামাজিক বিদ্যমান বাস্তবতায় এসব বিষয়ে দ্বিমত করার তেমন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের প্রতিফলন নেই মর্মে উল্লেখ করেছেন কোন কোন সংস্থা। বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নকালে আমরা যেসব প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়েছি তার মধ্যে অন্যতম ছিল টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.৮ শতাংশ। বিবিএস-এর সাময়িক হিসাবমতে বিগত দুই বছরের মত চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা ৭.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাস আয় বেড়েছে ১৭.৫ শতাংশ। অথচ বিগত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাস আয় ১৪.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। রফতানির ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৭ শতাংশ, বিগত অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ৩.১ শতাংশ। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের ইতিবাচক ধারা এবং দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তথা তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নয়নের ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে গতিশীলতা আসায় এসময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধিও অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫.২ শতাংশ, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১১.৭ শতাংশ। অন্যদিকে, এপ্রিল ২০১৮ শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭.৭ শতাংশ। এছাড়া, ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হারের ব্যবধান হ্রাসের ধারাও অব্যাহত রয়েছে। সঞ্চয় ও ঋণের সুদের হার ব্যবধান ২০১৭ সালের এপ্রিলের ৪.৬৫ শতাংশ থেকে চলতি এপ্রিলে ৪.৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সুদের হারের ব্যবধান হ্রাস ও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মসংস্থান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, এক্ষেত্রে আমরা বিশেষ কোন উদ্যোগ নিইনি। এই অভিমতটি একান্তই ভিত্তিহীন। সরকার ২০০৯ সালে একটি ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু একসঙ্গে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। সেজন্য এই প্রকল্পটি ২০০৯ সাল থেকেই প্রতিবছর কয়েকটি থানায় শুরু করা হয়। এর ফলে এদেশে কর্মসংস্থানে তেমন অসুবিধা হয় না। এছাড়া মনে রাখা উচিত যে, আমরা প্রতিবছর নিম্নতম ৫ লাখ শ্রমিককে বিদেশে পাঠাই। চলতি অর্থবছরে এই খাতে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও দেশে দক্ষতা আহরণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বহু প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।’
সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করায় সরকার প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন দুর্গত গোষ্ঠিকে সাহায্য করার জন্য ভাতার পরিধি ও হার ক্রমাগত বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এই নিরাপত্তা কৌশলকে আরো সুসমন্বিত, শক্তিশালী ও সার্বজনীন করতে সরকার সচেষ্ট থাকবে।