বাসস প্রধানমন্ত্রী-৬ : বুয়েট চাইলে তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

505

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৬
শেখ হাসিনা-সংবাদ সম্মেলন-ছাত্র রাজনীতি
বুয়েট চাইলে তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : দেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বুয়েট চাইলে তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই এই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। বুয়েট চাইলে তারাও বন্ধ করতে পারে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা।’
তিনি বলেন, ‘বুয়েটের ছাত্ররা আছে, সিন্ডিকেট আছে, কমিটি আছে। তারা যদি মনে করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিতে পারে। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের যোগদানে নিউইয়র্ক সফর এবং এরপর ভারতে দ্বিপাক্ষিক সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সর্বাগ্রে ছাত্র রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি করেই এতদূর এসেছি। দেশের ভালো-মন্দ চিন্তা আমার মাথায় ওই ছাত্রজীবন থেকে আছে বলেই আমরা দেশের জন্য কাজ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যারা উড়ে এসে বসেন, তারা আসে ক্ষমতাকে উপভোগ করতে। তাদের কাছে তো দেশের চিন্তা-ভাবনা থাকে না। এটা শিক্ষা, জানার এবং ট্রেনিংয়ের ব্যাপার। এটা ছাত্র রাজনীতি থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।’
আইয়ুব সরকারের পথ ধরে জিয়াউর রহমান এবং অন্যান্য স্বৈরাশাসকরা বারবার ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের চরিত্র হনন করে তাদের ভোগ-বিলাসের লোভ দেখিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের যত ধরনের শাস্তি আছে সব দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কারো দাবির অপেক্ষায় তো আমি বসে থাকিনি। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এরপর আন্দোলনই বা কীসের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘যে বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে তাদের কষ্টটা কী সেটা আমি জানি। তাকে (আবরার ফাহাদ) নৃশংসভাবে মারা, এটা কেন। যত রকম শাস্তি আছে সব দেয়া হবে। কোনো দল দেখা হবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বুয়েটের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে আলামত সংগ্রহের নির্দেশ দেই। যখন পুলিশ আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে তখন তাদের আটকে দেয়া হলো। তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হলো কেন? সেটা জানা দরকার। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি তো সঙ্গে সঙ্গে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছি ঐ রুমে কারা ছিল সবগুলোকে অ্যারেস্ট করো। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে আমি মেনে নেবো না। ছাত্রলীগকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকেছি, নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নেয়ার।’
রাজধানীসহ সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘নামমাত্র টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও আবাসিক হলে কারা থাকছে, কারা মাস্তানি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’ ‘স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয়’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েটের ছাত্র আন্দোলন প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি তারা দূরে থাকবে। যারা আন্দোলন করছে করতে থাক। যতদিন খুশি আন্দোলন করতে থাক, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের নিজেদের ভেতরেই যদি কিছু হয় তো সেটার দায়িত্ব কে নেবে? সে দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারব না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এভাবে মানুষ খুন করতে পারে, তারা অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এই সিকিউরিটি কীভাবে দেয়া হবে?’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভিসিকে আল্টিমেটাম দিল, ভিসি কিন্তু সেখানো গেল, তারা ভিসিকেই আটকালো। ভিসির সঙ্গে যে টোনে তারা কথা বলছে, কে ছাত্র কে ভিসি সেটাই তো বোঝা মুশকিল। শিক্ষকদের প্রতি আচরণ অন্তত সম্মানজনক হওয়া উচিত।’
শেখ হাসিনা আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘আমরা মনে করি এরা হচ্ছে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। তারা এটা বোঝে না? এত সমর্থন পাওয়ার পর তাদের আন্দোলন আর কন্টিনিউ করার দরকার আছে?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটা ছাত্র মারা গেছে, তাদের মনে ক্ষোভ আছে, দুঃখ আছে, তারা সেটা দেখাচ্ছে। আন্দোলন করছে, করুক। আমরাও তো আন্দোলন করে করেই তো এই জায়গায় এসেছি। আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো আমি কখনো যাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝি স্বজন হারানোর কষ্ট কেমন। তার মা-বাবার কেমন লাগছে। আমি ৩৮ বছর পর মা-বাবা হত্যার বিচার পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে অতীতের কিছু হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সাংবাদিকদের।
তিনি বলেন, ‘বুয়েটে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সনি হত্যা হয়েছে। বুয়েটে আমাদেরও তো অনেকে হতাহত হয়েছে। কই বিচার হয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি অবস্থা ছিল। অস্ত্রের ঝনঝনানি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ক্ষমতায় আসার পরই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ ও লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরেছে। যার জন্য কাজ করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান এবং ক্যাসিনো বলে স্বীকৃত জুয়ার আড্ডার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান থাকার ইংগিত দেন।
ক্যাসিনো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা এখন ক্যাসিনো খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে বা এ ধরনের জুয়া খেলায় অভ্যস্ত, কেউ হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কেউ হয়তো নানা ফন্দি আঁটছে তাদের বলছি, একটা দ্বীপ খুঁজে বের করেন, সেই দ্বীপে আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব। ভাসানচর বিশাল দ্বীপ। এক পাশে রোহিঙ্গা আরেক পাশে আপনাদের ব্যবস্থা করে দেব। সবাই ওখানে চলে যান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাস্তবতা বলছি, অভ্যাস যখন বদভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, এ বদভ্যাস তো যাবে না। বার বার খোঁচাখুঁচি করতে হবে। তাই বার বার খোঁচাখুঁচি না করে একটা জায়গাই দিয়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘কারা কারা করতে চান (ক্যাসিনো) তারা যান, নীতিনালা তৈরি করেন, লাইসেন্স নিতে হবে, ট্যাক্স দিতে হবে, তারপর যে ইচ্ছে খেলুক আমার কোনো আপত্তি নাই। এতে সরকারের আয় বাড়বে, দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে যেখানে অনিয়ম আছে সেখানেই আমরা ধরব। কতদূর যাবে আর কতদূর যাবে না সেটা কোনো কথা নয়। এটা বহুদিন ধরে ছিল, কেউ কখনও বলেনি, খেয়ালও করেনি। আমি যদি বলি আপনারা সাংবাদিকরা কোনো দিন বলেননি যে এ রকম একটা অনিয়ম হচ্ছে। এত খবর আপনারা রাখেন, আপনাদের ক্যামেরা এত জায়গায় ঘুরে। তো কই এই জায়গায় কেন পৌঁছায় নাই? সে প্রশ্নের জবাব কি দিতে পারবেন? পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমি যখনই এ খবর পেয়েছি তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এ রকম ব্যবস্থা নিতেই থাকব।’
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সংবাদ পত্র, সংবাদ সংস্থা সহ গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
বাসস/এএসজি-এফএন/২৩১০/-এবিএইচ