বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত

257

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-৭টি চুক্তি স্বাক্ষর
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস উপকূলীয় নজরদারি সিস্টেম (কোস্টাল সারভেইলেন্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
ত্রিপুরায় সাবরুম শহরে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে ফেনী নদী থেকে থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতা স্মারকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং ভারতের পানি সম্পদ সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং স্বাক্ষর করেন।
ভারত থেকে নেওয়া ঋণ চুক্তি (্এলওসি) বাস্তবায়ন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যেকার চুক্তিতেও এই দু’জনই স্বাক্ষর করেন।
দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর এবং সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের পর দুই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত অংশীদারিত্বমূলক তিনটি দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প যৌথভাবে উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- খুলনার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিআইপিএসডিআই), রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকায় ‘বিবেকানন্দ ভবন’ নামে একটি ছাত্র হোস্টেল এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরাতে এলপিজি আমদানী প্রকল্প।
উদ্বোধন পরবর্তী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রচলিত ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সহায়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘একইসঙ্গে দুই দেশ বিভিন্ন নতুন এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রেও সহযোগিতার হস্তকে প্রসারিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- সুনীল অর্থনীতি, সমুদ্রসীমা, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানী এবং সাইবার নিরাপত্তা, ’যোগ করেন তিনি।
এই বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক সহযোগিতার কারণে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সমগ্র বিশ্বের কাছে সুপ্রতিবেশী সুলভ সম্পর্কের উদাহারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশের মুুক্তিযুদ্ধকালে ভারত সরকার ও জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা পরম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি চিরিদিনের জন্য একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।’
ভারতের আর্থিক অনুদানে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে ৪ তলা ‘বিবেকানন্দ ভবন’ (ছাত্র হোষ্টেল) নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিকাশে এই ভবনটিভূমিকা রাখবে। এখানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা স্বামী বিবেকানন্দের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে স্থাপিত বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ওই অঞ্চলের ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে নানা ধরনের সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিন শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিআইপিএসডিআই এই অঞ্চলের য্বুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে এলপিজি রপ্তানির সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। এর ফলে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জ্বালানি চাহিদা পূরণ সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রকল্প তিনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ এবং ভারতের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতেও দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের যৌথ অংশীদারিত্বমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের সফল পরিসমাপ্তির আশা প্রকাশ করেন।
সকলকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আজকের এই তিনটি প্রকল্পসহ গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই শুরু হওয়া তিনটি প্রকল্পের উদ্দেশ্য একই- মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন এবং এটাই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেরও মূল ভিত্তি।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সবসময় গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘এই দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক বিশ্বের কাছে একটি সুন্দর উদাহারণ।’
তিনি বলেন, ‘আজকের পর, এই সম্পর্ক আরো নতুন উচ্চতায় আসীন হলো।’
বাংলাদেশ থেকে ভারতে বাল্ক এলপিজি সরবরাহ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশই এ থেকে লাভবান হবে কেননা এটি দুই দেশের জন্যই সমান সুবিধাজনক পরিস্থিতির নির্দেশ করে।
বাসস/এএইচজে/অনু-এফএন/২০০৬/আরজি