চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

383

চট্টগ্রাম, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : জেলা পর্যায়ে সর্বাধিক চট্টগ্রামে দুইহাজার ১৪৪টি মন্ডপে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।এ উপলক্ষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
আজ শুক্রবার মহাযষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। পঞ্চমী তিথিতে বেলশাখায় দেবী দুর্গার বোধন হয়েছে। দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙার জন্য পারিবারিক ম-পে করা হয়েছে পূজা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দূর্গোৎসব উদ্বোধন করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নগরীর জামালখান কুসুম কুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলছে মায়ের আরাধনা। জগতের মঙ্গল কামনায় কৈলাসবাসি দেবীর আগমন ঘটেছে ঘোড়ায় চড়ে। বিজয়া দশমীতেও দেবী দুর্গা কৈলাসে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত জানান, সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০টির বেশি ম-পে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব হতে যাচ্ছে। জেলা পর্যায়ের এবারও দেশের সবচেয়ে বেশি দুর্গাপূজা মন্ডপ চট্টগ্রাম জেলায়। এখানকার ১৫টি উপজেলায় এবার ১ হাজার ৮শ ৭৪টি ম-পে এবং মহানগরের ১৬টি থানায় ২৭০টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গাপূজা চলছে। মহানগর ও জেলা মিলিয়ে চট্টগ্রামে এবার ২ হাজার ১৪৪টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, জেলা পর্যায়ে দেশের অন্য কোনো জেলায় চট্টগ্রামের মতো এতো দুর্গাপূজা ম-প নেই। চট্টগ্রাম জেলার উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশী পুজামন্ডপ রাউজানে ২৩২টি। কর্ণফুলী উপজেলায় সবচেয়ে কম ১৩টি পূজাম-প।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার জানান, এবছর নগরীর ১৬টি থানায় ২৭০টি ম-পে দুর্গাপূজা চলছে। গতবারের চেয়ে জেলা ও নগরে পূজাম-প বেড়েছে। এর মধ্যে নগরে বেড়েছে ১৫টি। পরিষদের উদ্যোগে পূজার আয়োজন করা হয়েছে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মেধস মুনির আশ্রমে মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেখানে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী মায়ের পূজা চলছে বলে জানিয়েছেন আশ্রমের অধ্যক্ষ বুলবুলানন্দ ব্রহ্মচারী।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আজ শুক্রবার শহরের জেএমসেন হলে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্বে দুপুর ২টায় মাতৃসম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের মহিলা সম্পাদিকা রুমকি সেনগুপ্ত। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিক আয়শা খান। পরে, বিকেল ৪টায় পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২য় পর্বে সন্ধ্যায় প্রতিমা মঞ্চের আবরণ উন্মোচন করেন বাঁশখালী ও তুলসী ধাম চট্টগ্রাম এর মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শানন্দপুরী মহারাজ। এরপর আলোচনা সভা, বস্ত্র ও পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি রাখাল দাশ গুপ্ত, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্য্য। প্রধান বক্তা ছিলেন রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত।
এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেইন, জেএমসেন হল, চেরাগী পাহাড়, রাজাপুকুর লেইন, চকবাজার, পাথরঘাটা, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মন্ডপে মন্ডপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। এই চালচিত্রে আছেন দেবাদিদেব শিবও। লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সরস্বতী জ্ঞানের প্রতীক। কার্তিক হচ্ছেন দেবসেনাপতি, শত্রুনাশকারী। আর গণেশ সর্বসিদ্ধিদাতা অর্থাৎ মানুষের কামনা পূরণকারী।
দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এসেছেন বিশ্ব শান্তির জন্য তথা সবার মঙ্গলের তরে। প্রতি শরতে মর্ত্যে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয় ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে। ভক্তকুলের আবাহন আর পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গা প্রসন্ন হন। পূজার সময়কালে সন্ধ্যায় ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরা বাদ্য, বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে পূজাম-পগুলো।