মশা নিধনে ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার

224

॥ মো. সাজ্জাদ হোসেন॥
ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’ সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাসসকে বলেন, ‘এটা আমাদের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছর যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে সেহেতু কেন্দ্রীয় মশক নিবারণী দপ্তর নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তবে আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্ব হচ্ছে মশক নিবারণ করা। আগে যেহেতু স্থানীয় সরকারের এতো প্রতিষ্ঠান ছিল না, সেহেতু কেন্দ্রীয়ভাবে ম্যালেরিয়া নিবারণের জন্য মশক নিবারণী দপ্তর করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আইনের মধ্যে বলা আছে, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা মশা নিধন করবে। সুতরাং এখন এটা নিয়ে কি করণীয়, তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
তিনি বলেন, এর সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য অনেক বিষয় জড়িত। মশক নিবারণী দপ্তরটির পরিধি বাড়ালে কতটুকু বাড়ানো হবে, কাদের সঙ্গে কতটুকু সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং এটা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না সিটি কর্পোরেশনের অধীনে থাকবে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কি সিটি কর্পোরেশন থেকে বেতন পাবেন, নাকি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। এর সবকিছুর সঙ্গেই জনবল ও তাদের বেতন-ভাতাসহ আর্থিক বিষয় জড়িত রয়েছে।
মশক নিধনে গবেষণার জন্য একটি আধুনিক গবেষণাগার করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘কলকাতার আদলে একটি গবেষণাগার করা যায় কিনা, উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছে।’
ঢাকার ম্যালেরিয়া নিরোধের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ‘মশক নিয়ন্ত্রণ স্কীম’ নামে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এই প্রতিষ্ঠানটির যত জনবল তা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আত্মীকরণ করা হয়েছে। তারা দুই সিটি কর্পোরেশনের হয়ে এখন রাজধানীর মশক নিধনে কাজ করছে। সিটি কর্পোরেশনের চাহিদা অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তারা কাজ করছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটির জনবল বাড়িয়ে ওষুধ কেনার নিজস্ব ক্ষমতাসহ কীট নিরোধে গবেষণা কার্যক্রম চালানোর সুযোগসৃষ্টি করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রতিষ্ঠানের সহকারি পরিচালক আ.ন.ম ফয়জুল হক বাসসকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে ঢাকায় মশা মারার কাজ হাতে নেয়া হয়েছিলো। তখন সংস্থাটি বেশ জমজমাট ছিলো। অনেক লোক কাজ করতেন। মশা নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করতো’
তিনি জানান, মশক নিয়ন্ত্রণ স্কিমের আওতায় কন্টিনজেন্ট হিসেবে ৪১৭ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। পরে এদের মধ্য থেকে ৩৩৮ জনকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে নেয়া হয়। এরপর মশা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে অনেক কাজ হয়।
১৯৮০ সালে এই বিভাগটিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। ১৯৮২ সালে এনাম কমিটি ৩৯৬টি পদ সৃজন করে এই দপ্তরের জনবল পূনবিন্যাস করে। এই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’। ওই সালেই প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় থেকেই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ন্যাস্ত করা হয়।
ফয়জুল হক বলেন, ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভাগ হলে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুই সিটির অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এখন সংস্থটির জনবল রয়েছে ২৭৯জন। এরমধ্যে ২৩১ জন ক্রু, ৩২ জন সুপারভাইজার ও ৬ জন ইনসেক্ট কালেক্টর (আইসি) রয়েছে। এই জনবল অর্ধেক করে দুই সিটি কর্পোরেশনে ন্যাস্ত করা হয়। ওই সময় থেকে দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো মশার ওষুধ কিনে তাদের হাতে দেয়া, কারা কোথায় লার্ভি সাইট দেবে না এডাল্টি সাইট দেবে এই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই দপ্তরটি মশক নিধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে আসার পর থেকে যে কাজে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো মশা নিধন করা। কিন্তু, আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমরা শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মশা মারার ওষুধ বিভিন্ন জোনে বিতরণ করি এবং এখানে ওষুধ মজুদ করি অর্থ্যাৎ ভবনটি এখন গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
১৯৮০ সালের আগে পর্যন্ত এখানে একটি গবেষণাগার ছিল। নিয়মিত এখানে গবেষণা কার্যক্রম চলতো। এখন এই গবেষণাগারটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিকায়ন করে জনবল বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে শুধু ঢাকা নয়, এই প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশের মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।