বিচারিক কর্মঘন্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি পরিহার করতে হবে

188

ঢাকা, ১ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : বিচারিক কর্মঘন্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষে ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে।
প্রধান বিচারপতির আদেশে সুপ্রিমকোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনার সার্কুলার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দেশনা না মানলে তা অসদাচারণ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭ এর পাশাপাশি প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন এবং অনুরূপ যেকোনও ডিভাইসের মাধ্যমে যে কোনও ব্যক্তির তথ্য, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করা যায়। তবে অতিমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়, যা ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়েছে এবং ৮ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
যে ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে হবে-জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনও প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার। কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয়প্রতিপন্নমূলক কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
লিঙ্গবৈষম্যমূলক কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার। জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
কোন মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।
অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনও স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদি অন্যজনকে সংযুক্তকরণ, আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচার।
যে সকল বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তা হলো-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযাগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারক সুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেয়া যাবে না। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল, গ্রুপ থাকতে পারে যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারক সুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহের প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখিত নির্দেশনাবলী অনুসরণে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে সুপ্রিমকোর্টের নজরে আনা যেতে পারে বলেও সার্কুলারে বলা হয়।