বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শহরে বস্তি এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়

114

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিক্ষা-শহর
শহরে বস্তি এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়
ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস): শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু কখনো কখনো আর্থিক কারণে অনেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করলেও শেষ করতে পারেন না। যদিও বর্তমান সরকার নারী শিক্ষা অবৈতনিক করার পাশাপাশি দিচ্ছে শিক্ষা বৃত্তিও। তারপরও বিশেষ করে শহরের বস্তি এলাকায় আর্থিক কারণে অনেক দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা চাইলেও ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারে না। এ সকল পরিবারের মেয়েদের শিক্ষা বৃত্তি দিচ্ছে সরকার। সরকারের এ বৃত্তি পেয়ে অনেকেই ফিরে পেয়েছেন শিক্ষা জীবন। তাদেরই একজন সাথী। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাথীর পড়ালেখা গত বছর হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেন তার মা। বছরের মাঝখানে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সী সাথীর ভবিষ্যৎ এক প্রকার অন্ধকার হয়ে যায়। মূলত অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা সাথীর মায়ের পক্ষে তার পড়া চালিয়ে যাওয়ার মত সামর্থ্য ছিল না। আর তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তার মা।
রাজধানীর কড়াইল বস্তি এলাকার বাসিন্দা সাথীর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার পক্ষে মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার মত সামর্থ্য নেই। তাই তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পড়া বন্ধ করে দিয়ে তার বিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় মহিলা নেতৃবৃন্দ সেই বিয়েও বন্ধ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, কিন্তু এ বছর শহর উন্নয়নের একটি প্রকল্প থেকে সাথীর পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য নয় হাজার টাকা শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছি। আর তাই এ বছর আবার তাকে নতুন এক স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। সে এখন নিয়মিত মহাখালি মডেল স্কুলে যাচ্ছে।
এদিকে অষ্টম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী ফাতেমারও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল তার পরিবার। মূলত অর্থের অভাবে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়। তাকেও ওই প্রকল্প হতে শিক্ষা বৃত্তি দেয়ার পর মহাখালি টিএন্ডটি আইডিয়াল স্কুলে পুনরায় ভর্তি করা হয়েছে।
ফাতেমা বলেন, আবার স্কুলে ভর্তি হতে পেরে আমি খুব খুশি। আর এটা সম্ভব হয়েছে ওই শিক্ষা বৃত্তি পাওয়ার জন্য। অন্যথায় পরিবারের পক্ষে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যেত।
করাইল এলকার বাসিন্দা ফাতেমার মা নূরজাহান বেগম বলেন, বৃত্তি হিসেবে পুরো টাকাটাই ফাতেমার পড়ালেখার জন্য খরচ করা হয়েছে। টাকাটা পাওয়ায় আমরা ফাতেমাকে পুনরায় স্কুলে ভর্তি করাতে পেরেছি। এতে আমার মেয়ে খুব খুশি। আমরাও আনন্দিত। আর টাকাটা পাওয়ায় আমরাও দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হলাম।
তিনি বলেন, আমরা নিজেরা তেমন কোন পড়ালেখা করতে পারিনি। এখন আমাদের সন্তানদের যদি পড়াতে পারি, তবে সেটাই হবে আমাদের জন্য চরম ভাগ্যের। সন্তানেরা শিক্ষিত হলেই আমরা বাবা-মা খুশি।
সাথী এবং ফাতেমার মত আরো অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা যারা শহরের বস্তি এলাকায় বসবাস করছে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই প্রকল্প হতে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
ইউএনডিপির আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পুওয়র কমিউনিটিস’ (এলআইউপিসি) প্রকল্পের অধীনে এসব শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়।
এলআইউপিসি’র শহর ব্যবস্থাপক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বস্তি এলাকার প্রায় ২,১৯২ জন শিক্ষার্থীকে এ প্রকল্প থেকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বছরে ৩,৬০০ টাকা করে বৃত্তি পায়। পঞ্চম শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পায় ৪,৮০০ টাকা করে। আর ৯,০০০ টাকা করে পায় অষ্টম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের। মঞ্জুরিকৃত এই বৃত্তি পরপর তিন বছর বছর পর্যন্ত দেয়া হয় যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে এই শিক্ষা বৃত্তি চালু হওয়ার পর থেকে এ সব বস্তি এলাকায় স্কুল হতে ঝড়েপড়ার সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। এছাড়াও অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার হারও কমে গেছে, মেয়েদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। কারণ তারা মনে করছে এই অর্থ দিয়েই তারা তাদের পড়ার খরচ চালিয়ে যেতে পারবে।
কমিউনিটি সংগঠক তাহমিনা আখতার বলেন, তারা এ সব বস্তি এলাকা থেকে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করেন এবং তাদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি মঞ্জুর করান এবং পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, এই করাইল এলাকায় এক সময় স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যপট পাল্টেছে। প্রায় সব বাবা-মা’ই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন।
এই এলআইউপিসি প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হবে। শহরের দারিদ্র্যতা দূরীকরণের মধ্যে দিয়ে মূলত সুষম সমাজ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ অর্জনে এ প্রকল্প কাজ করছে, যেখানে কাউকে পিছনে ফেলে নয় বরং সবাইকে একসাথে করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/পিএসবি/স্বব/১৬৫০/আহো/-এসএইচ