বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে চারদফা প্রস্তাব করবেন প্রধানমন্ত্রী

122

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
প্রধানমন্ত্রী-রোহিঙ্গা-নিউইয়র্ক
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে চারদফা প্রস্তাব করবেন প্রধানমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো ভাল কিছু নয়। ‘অনেক রোহিঙ্গা ব্যক্তি রাখাইনের অভ্যন্তরীণ-বাস্তচ্যুত শিবিরে (আইডিপি) বাস করছে এবং দিনে দিনে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, বিশ্ব যখন অতীতের কুখ্যাত বন্দী শিবিরগুলোর সঙ্গে আইডিপি ক্যাম্পগুলোর মিল খুঁজে পেল, তখন মিয়ানমার সরকার দ্রুত তা অস্বীকার করছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, মিয়ানমারের কাছে গোপন করার মতো কিছু যদি না থাকে, তাহলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘর কর্মকর্তা এবং মানবিক সহায়তা কর্মীদের রাখাইনের পরিস্থিতি দেখতে যেতে বাধা দিচ্ছে কেন?
তিনি বলেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং মানবিক সহায়তা কর্মীদের পরিদর্শনের জন্য অবাধে সেখানে যাতায়াত করতে এবং শিবিরগুলোতে বাস করা মানুষদের সহায়তা করতে দিন। মিয়ানমারের উচিত সংকট সমাধানের অযোগ্য হয়ে ওঠার আগেই তা নিরসন করা উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রত্যাবাসন হওয়া উচিৎ প্রথম অগ্রাধিকার।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু শরণার্থীকে প্রত্যবাসনের জন্য দুইবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, এর কারণগুলো সুস্পষ্ট। শরণার্থীরা প্রত্যাবাসনকে নিরাপদ মনে না করলে কেউ ফিরে যাবে না।
ড. মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া প্রত্যাবাসনকে জোর দিয়ে যেতে থাকবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি নিরাপদ স্বতন্ত্র ও মর্যাদাপূর্ণ অধিকার দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান সম্পন্ন করেই কেবলমাত্র এই সংকট নিরসন করতে হবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ভয়, বিদ্বেষ ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের ইস্যুটিকে ব্যবহার করেছে।
ড. মাহাথির বলেন, সুতরাং শুধুমাত্র নাগরিকত্ব দিতে হবে এই বিবেচনা থেকেই এটি করা হয়েছে যা অগ্রহণযোগ্য। এটা স্পষ্ট যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ড. মাহাথির আরও বলেন, ‘এই ধরণের উদ্যোগ কিভাবে কাজ করবে তবে কি নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীরদের এই ধরণের কর্মকান্ড সিস্টেমের অংশ?’
তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমার সরকার এই সঙ্কটের সমাধান করতে রাজি নয়। ‘সুতরাং এটি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতি নিয়ে কিছু করতে হবে।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ভূমিকা পালন করা উচিত। এটি ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্দশা রোধ করার আশা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই, এর নীরবতা বধিরতারই নামান্তর।
তিনি বলেন, সিকিউরিটি কাউন্সিলের পদক্ষেপ ছাড়া, সংকটের সমাধান এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অন্যদের অবশ্যই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ড. মাহাথির বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতিবাচক প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়া ওআইসির প্রশংসা করেছে। অপরাধীরা যে জঘন্য অপরাধ করেছে তা থেকে রেহাই না পায়, এটি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের বিষয়টি আনার সিদ্ধান্তে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, অন্যান্য দেশগুলো ওআইসিকে সমর্থন করবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার মানবিক সহায়তার কথা তুলে ধরে ড. মাহাথির বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর পক্ষে যতটা সম্ভব করবে।
মাহাথির আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশা শেষ করতে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশ ও আমাদের পাশে দাঁড়াবে। আমাদের এখনই এই সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের উপর নির্মমতাকে কম্বোডিয়ার গণহত্যার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা খোলাখুলিভাবে এই ব্যাপারে কথা বলি। রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছে তা হচ্ছে গণহত্যা।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে গণহত্যা, ব্যাপক গণধর্ষণ ও অন্যান্য বড় ধরনের মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলোপমেন্ট ডিজঅর্ডার্স-এর সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, মুহাম্মদ ফারুক খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।
মোমেন আরো বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন চান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উদারতার পরিচয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে আলোচকদের সবাই মিয়ানমারকে তাদের এই নাগকিদের ফিরিয়ে নিতে রাজি করাবে বলে আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের অর্জন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব আয়োজিত একটি অঙ্গীকার অধিবেশনের পর এটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশ ইউএনএইচসিআর-কে মোট ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাসস/এসএইচ/অনু-কেজিএ -কেএআর/১৭০৫/আরজি