বাসস দেশ-২ : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো সম্পৃক্ত থাকতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

137

বাসস দেশ-২
পররাষ্ট্রমন্ত্রী-ব্রিফিং
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো সম্পৃক্ত থাকতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউইয়র্ক, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টায় আরো সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে বলেছে, মায়ানমার নাগরিকদের অবশ্যই তাদের দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসেফ আল-ওথাইমিন ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল-আসফ এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইনস এবং গাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিগণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয় যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে তারা বলেন, মায়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেয়ার জন্য তারা চাপ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীগণ রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন চেয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, তারা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা সকলেই বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার জন্য মায়ানমারকে রাজি করানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অর্জন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব আয়োজিত অঙ্গীকারমূলক অধিবেশনের পর এ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ওআইসি’র বিভিন্ন সদস্য দেশ ইউএনএইচসিআরে মোট ২৭ কোটি ডলার দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অংশগ্রহণে সোমবার জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মূল সমস্যা সমাধানে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে চীনের দেয়া প্রস্তাবের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীন সমস্যাটি সমাধানের পটভূমি তৈরির বিষয় সহজতর করবে যাতে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়। আমরা মনেকরি, এটি একটি বড় অর্জন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করে এ প্রস্তাব দিয়ে আশ্বাস দিয়েছে যে তারা সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে।
ড. মোমেন বলেন, গত জুলাইয়ে বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনার পর চীন এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, ‘চীন অত্যন্ত ভাল একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করছি যে, দীর্ঘ বিলম্বিত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এটি সহায়ক হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাবাসনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ ও সময় নির্ধারণ করিনি কারণ অতীতে এটি (নির্দিষ্ট তারিখ) কাজ করেনি।’

মন্ত্রী বলেন, মায়ানমারও সোমবার বলেছে তারা যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জোরদার করতে চায়।
তিন পক্ষ বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং চীন বলেছে, যদি রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হয়, সেখানে মৌলবাদের উত্থান ঘটবে।
মোমেন বলেন, ‘চীন বলেছে, যদি সংকট দীর্ঘায়িত হয় তাহলে ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য তা বিপদজনক হয়ে উঠবে, যা আমরাও বলে আসছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বুঝতে পেরেছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের আন্তরিককতায় ঘাটতি রয়েছে এবং এজন্য এই ইস্যুতে বেইজিং মায়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন, তাদের নিরাপত্তা এবং নিজ দেশে অবাধ চলাচলের নিশ্চয়তা চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দফতরে উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তি মূলক অর্থায়ন বিষয়ে নবনির্বাচিত থাই প্রধানমন্ত্রী এবং আশিয়ান চেয়ারম্যান প্রযুত চান-ও-চা এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা ডাচ রানী ম্যাক্সিমার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিখাতে বাংলাদেশ ভালো করছে তবে বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে চায়।

উত্তরে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি বিষয়ে তার দেশের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্যাংকক তাদের কৃষি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত উপায়ে ঢাকার সাথে কাজ করতে চায়।
প্রযুত চান-ও-চা আশা করেন যে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২শ’ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
কুইন ম্যাক্সিমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বাপারে ড. মোমেন বলেন, ডাচ কুইন বাংলাদেশে কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

বাসস/এসএইচ/এমএবি/এমএজেড/১৩২০/শআ