বাজিস-১ : বান্দরবানে গড়ে উঠছে নারীবান্ধব বিপণী কেন্দ্র

296

বাজিস-১
বান্দরবান- বিপণী কেন্দ্র
বান্দরবানে গড়ে উঠছে নারীবান্ধব বিপণী কেন্দ্র
বান্দরবান, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ( বাসস) : নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির সুবিধার জন্য বান্দরবানে গড়ে তোলা হচ্ছে চারতলাবিশিষ্ট বিপণী বিতান। জয়িতা বান্দরবান কর্মসূচির আওতায় বান্দরবান সদর উপজেলার মেঘলা পর্যটন সংলগ্ন তালুকদার পাড়ায় এ বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে । নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমিতি ভিত্তিক সংগঠিত করে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণসহ আরো ৬৭উদ্দেশ্য নিয়ে জয়িতা বান্দরবান কর্মসূচি ।
বান্দরবান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে ১৫০ টি সমিতি আছে । এর মধ্যে ৫৯ টি সমিতি সক্রিয়, আর নিষ্ক্রিয় আছে ৫১টি । আর সমিতিগুলোর মধ্যেই বিপিণীকেন্দ্রে ৪৫ টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে । সারা দেশে নারী উদ্যোক্তাদের ৪টি বিপণী কেন্দ্রের মধ্যে বান্দরবানে একটি ।
আরো জানা যায়, এরই মধ্যে বিপণী কেন্দ্রকে ঘিরে এ কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্দকৃত দোকানের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্লক বাটিক, এমব্রয়ডারী ও বুটিকস, বেবী কিডস তৈরী , ছেলেদের পাঞ্জাবী, ফতোয়া তৈরী, স্থানীয় তাঁতের ব্যবহারে তৈরী পোশাক ও পণ্য, নকশী কাঁথার স্টিচ, গৃহ সজ্জার আইটেম, স্থানীয় কারুপণ্যজাত সামগ্রী, হস্তজাত শিল্প, বিভিন্ন রকমের শোপিস, কৃষিজাত পণ্য এবং শস্যের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকেজিং ও বিক্রয় এবং কৃষিজাত ও ফলজাতীয় পণ্য উৎপাদন, ফাস্টফুড প্রস্তুত প্রণালী পণ্যসামগ্রী ও বেকারী পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয় পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ।
বান্দরবানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী জানান, কোন ব্যক্তিকে দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে না । সমিতিকে দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে । আর দোকানের বিক্রিত পণ্যের লাভের অংশ পাবে সমিতির সদস্যরা ।
তিনি জানান, ব্যক্তি নির্ভর সমিতি থেকে আমরা সরে আসতে চাই । সমিতিগুলো হবে দলবদ্ধ । সমিতিগুলো পেশাগতভাবে এগিয়ে যাক আর উৎপাদনমুখী হোক।
দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের এককালীন ২৫ হাজার টাকা জামানত প্রদান করতে হবে । আর দোকানের মাসিক ভাড়া পরিশোধ করতে হবে ২ হাজার টাকা বলে জানান উপ-পরিচালক ।
এদিকে ভবন নির্মাণের বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধনকৃত মহিলা সমিতি ভিত্তিক ব্যতিক্রমি ব্যবসায়ী উদ্যোগ (জয়িতা-বান্দরবান) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৪ তলা বিশিষ্ট মহিলা বিপণী কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে । বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র মেঘলায় ২০ শতক জমিতে ২৭ হাজার ২৯৯ বর্গফুটের ৪ তলা বিশিষ্ট মহিলা বিপনী কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে । চার তলা এ ভবনে ১৪৭২ বর্গফুট জুড়ে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা । ৮৪০ বর্গফুটের একটি চাইল্ড কেয়ার কক্ষ, ১৪৮০ বর্গফুটের মাল্টি পারপাস হল রুম, ৪০০ বর্গফুটের ২ টি ইন্সপেকশন রুম রয়েছে । এছাড়াও পুরো ভবনে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৪৫ টি দোকানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।
আরো জানা যায়, পাঁচ কোটি চল্লিশ হাজার টাকার চুক্তি মূল্যে এ ভবেনর নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মি: ইউটি মং।
বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান জানান, এরই মধ্যে জয়িতা ভবনের ৮০% কাজের অগ্রগতি হয়েছে । আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা বিপণী কেন্দ্রটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বুঝিয়ে দিতে পারব ।
এদিকে স্থানীয় নারী উদ্যোক্তারা জানান, পাহাড়ের নারীরা সেলাই, রান্নাবান্না, বাঁশ-বেতের সরঞ্জাম, মাটির তৈজসপত্রসহ নানারকম পণ্য তারা উৎপাদন করেন। কিন্তু এসব পণ্য উৎপাদন করে বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন আর্থিক মজুরি পান না। উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণী বিতানের মাধ্যমে বিক্রি করে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবেন । নারীদের স্বাবলম্বী হতে বড় ভূমিকা রাখবে জয়িতা বান্দরবান কর্মসূচি ।
আরো জানা যায়, এক ছাদের নীচে অনেক পণ্যের সমাহার হবে । এছাড়াও বান্দরবান পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় এ বিপণী বিতানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকবে।
বান্দরবান উইমেন চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট লাল সানি লুসাই জানান, নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বেচা কেনায় সরকার একটিু প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছে । নি:সন্দেহে এ সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ । আর বান্দরবান পর্যটন শহর হওয়ায় এ মার্কেটে বেচা কেনা ভালো হবে । এ মার্কেটে পণ্য বিক্রি করে অনেক নারীর পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে ।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের অনেক নারীর আর্থিক ভাবে অনেকটাই অস্বচ্ছল । পার্বত্য অঞ্চলের কথা মাথার রেখে এককালীন দোকান বরাদ্দের টাকার পরিমাণ সরকারের আরো কমালে ভালো হয় ।
বাসস/সংবাদদাতা/১০-২৭/নূসী