বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : জরায়ু সংক্রান্ত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা

181

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী- জরায়ু
জরায়ু সংক্রান্ত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : রুনিয়া সরকার পেশায় একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। বয়স পঁয়ত্রিশ। দুই সন্তান, স্বামী এবং শাশুড়ী নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু কিছুদিন ধরে শরীর ভালো না রুনিয়ার। মাঝে মঝেই পেটে তীব্র ব্যাথা। গত কয়েক মাস ধরে পিরিয়ডও অনিয়মিত। পিরিয়ডের বিষয়টিকে খুব বেশী পাত্তা না দিলেও পেটের ব্যাথার প্রায় সময় অস্থির থাকেন রুনিয়া। শুরুতে মনে করেছিল হয়ত গ্যাসের সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে। তাই ব্যাথা হলেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে নিত। কিন্তু দিন দিন পেট ব্যাথা বেড়েই চলেছে। ইদানিং আবার রাতের বেলা মাঝে মাঝে জ্বরও আসছে।
এভাবে কিছুদিন চলার পর স্বামীকে জানায় বিষয়টি। স্বামী অসিত সেদিনই সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর এলাকার এক নারী রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যায় রুনিয়াকে। তিনি লক্ষণ শুনে কিছু ওষুধ লিখে দেন। বলেন, এগুলো এক সপ্তাহ খেয়ে আবার যেন তাকে জানায়। কিন্তু এক সপ্তাহ ওষুধ খেয়েও তেমন কোন ফল না পেয়ে আবার যান ওই ডাক্তারের কাছে। তিনি রেফার করেন ঢাকায় আরেক গাইনোলজিষ্টের কাছে।
রুনিয়া স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীসহ ঢাকায় আসেন ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তার সব কথা শুনে কিছু পরীক্ষা দিলেন। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ডাক্তার তাকে জানায় তার জরায়ু সংক্রমণ হয়েছে। এ কারণেই এমন সমস্যা।
গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ যাকে সংক্ষেপে পিআইডি বলে। আর পিআইডি হচ্ছে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। পিআইডির একটি কমন কারণ হচ্ছে ঈযষধসুফরধ ধহফ মড়হড়ৎৎযড়বধ নামক জীবাণুর সংক্রমণ। এছাড়া আন্যান্য কিছু জীবাণুও এ রোগের কারণ হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে এ জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এছাড়াও গর্ভপাত, জরায়ুর কোনো অপারেশন, অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদির মাধ্যমেও জীবাণু ভেতরে ঢুকতে পারে। কিছু লক্ষণ দেখে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়। এ রোগের কিছু পরিচিত লক্ষণ হলো- তলপেটে ব্যথা, জ্বর এবং অস্বভাবিক স্রাব, অনিয়মিত পিরিয়ড, এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং পেটে ব্যথা, সহবাসে ব্যভথা অনুভূত হওয়া।
ডা. নীরু বলেন, এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ এ রোগের জীবাণুগুলো অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
এ রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষার দরকার হয়। জরায়ুর মুখ বা মুত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যেতে পারে। এছাড়া সংক্রমণের লক্ষণ বোঝার জন্য রক্ত, প্রশ্রাব পরীক্ষা ও পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা হক বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় এন্টিবায়োটিক এবং পেইন কিলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় খেতে হবে। একইসঙ্গে স্বামী বা পার্টনারের চিকিৎসাও জরুরি। অন্যথায় বার বার জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হতে পারে যেমন- ডিম্বনালী সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হলে এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায়। এছাড়া যাদের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণের তীব্রতা কমানোর জন্য ডিম্বনালী এবং জরায়ু সার্জারি করে অপসারণ করা হয়।
তিনি বলেন, এর চিকিৎসা সময় মত না করালে কিছু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো হচ্ছে-দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারনে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়, ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সি হতে পারে, প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সচেতনতা এ সমস্যায় আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সেক্ষেত্রে নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এবং কনডম ব্যবহার জীবাণুর সংক্রমণ থেকে জরায়ুকে রক্ষা করে। এছাড়াও যত্রতত্র এম আর (গর্ভপাত) করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এম আর বা ডিএন্ডসি করার দরকার হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করতে হবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/অমু/স্বব/আহো/১৭৩০/এসএইচ