বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নার্সিং প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে : প্রধানমন্ত্রী

150

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-কেপিজে-ভাষণ
নার্সিং প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে দেশের সকল বিভাগে পর্যায়ক্রমে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২০০৬ সালে থাকা ৪৬টি থেকে বর্তমানে ১১১টিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে নার্সিং পেশাটি এক সময় অবহেলিত ছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘নার্সিয়ের মত একটা সেবামূলক পেশা। যে পেশাটি আমি মনেকরি সবথেকে সম্মানজনক একটি পেশা। কারণ, একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাঁর সেবা করা, তাঁর পাশে থেকে তাঁকে রোগমুক্ত করা এর থেকে বড় সেবা আর কি হতে পারে। অথচ আমাদের ডিপ্লোমা নার্সিংয়ের ওপরে আর কিছু ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যে কারণে এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে গ্রাজুয়েটস্ নার্স হবে, নার্সরা ট্রেনিং নেবে, পিএইচডি করবে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেদেরকে মানব সেবায় দক্ষ করে গড়ে তুলবে।’
‘আর সেজন্যই নার্সদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চাকরির আপগ্রেডেশন করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মর্যাদা না বাড়ানো হলে হয়তো অনেকেই এই পেশায় আসতে চাইবে না’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শিল্পনির্ভর গাজিপুরের শ্রমিক শ্রেনীর জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা ও এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার একটি উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, শুরুতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রথমে ১০ কোটি টাকা এবং আরো ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে দিয়ে ২০ কোটি টাকার দিয়ে এখানে একটি ট্রাস্ট ফান্ড করে দেওয়া হয়। যাতে এখান থেকে একেবারে হতদরিদ্র রোগীরা যেন চিকিৎসা সেবাটা পেতে পারে।
এখানে আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় রোগী আসে যাদের অপারেশন লাগে এবং অন্যান্য ব্যাপারেও অনেক অর্থ লাগে । সেখানে ৫ হাজার টাকার অধিক রোগীর জন্য বরাদ্দ করতে গেলে ট্রাস্টের অনুমোদন লাগে যে কারণে আমরা আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেব।’
তবে, জরুরী অবস্থার কোন রোগীর ক্ষেত্রে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অর্থের দিকে না তাকিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানকার চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
দেশের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক স্বনামধন্য চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে অন্তত সপ্তাহে একদিন করে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন, যার ফলে এই হাসপাতালটি নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,তাঁর সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে এখন স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ের মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধও বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ,বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকারে আসার পর এই ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের যুক্তি হিসেবে তারা বলে, কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ সেবা নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দিবে। অথচ প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য চালু করা এই স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমটি খুবই দরকারি।’
‘যেখানে দরিদ্র মানুষেরা সহজেই সেবা পেয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় প্রসূতী নারী ও শিশুরা। বাড়ির কাছেই থাকায় পায়ে হেটে এসেই তাঁরা ডাক্তার দেখাতে পারেন,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বিগত সাড়ে দশ বছরে স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার ও গুণগত মান উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ে প্রজনন হার ও মৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ নবজাত শিশু ও মাতৃ-মৃত্যু হার হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সমানভাবে যে উৎসাহিত করছে তারই এক উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ।
তিনি বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর এটি একটি মানবিক উদ্যোগ যা আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শুরু করি এবং সে বাড়িটিও আমরা ট্রাস্টকে দান করে দেই।’
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহতদের নিয়মিত সহযোগিতা প্রদানসহ যেসব সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নে ট্রাস্টের নিজস্ব জমিতে নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ট্রাস্টের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে।’
তাছাড়াও বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট বিভিন্ন সময়ে সারাদেশে বিনামূল্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালন করে থাকে, বলেন তিনি।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৪৫/আরজি