শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে ভোলা সদর উপজেলা

261

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৬ জুন, ২০১৮ (বাসস) : ভোলা সদর উপজেলায় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে। ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ উপজেলায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ৫০ হাজার ৩৫৫ জন গ্রাহকের মাঝে ১ হাজার ২৪৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর প্রয়োজন রয়েছে ৬৪ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইনের। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগানকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলার দৌলতখান উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। আর জুনের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পাবে তজুমুদ্দিন উপজেলা। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যে জেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজ্যার (জিএম) মো. কেফায়েতউল্লাহ্ বাসস’কে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে গ্রাম বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা যদি শতভাগ বিদ্যুতের বিশেষ এ উদ্যোগ না নিতেন তবে অন্ধকারেই থেকে যেত এ জনপদ।
জিএম আরো বলেন, সমগ্র জেলাকে ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম উপজেলা হিসেবে দৌলতখানকে গতবছর সম্পুর্ণ আলোকিত করা হয়েছে। জুনের মধ্যে হবে তজুমুদ্দিন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে সদর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার মধ্যে আনা হবে। এতে করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষার মান বাড়বে, অভাব দূর হবে বলে মনে করেন জিএম মোঃ কেফায়েতউল্লাহ্।
সমিতির এজিএম মো. আব্দুল বাসেত বাসস’কে বলেন, সদর উপজেলার প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ১ হাজার ৩০৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন প্রয়োজন। আর এতে শতভাগ বিদ্যুতের সুফল ভোগ করবে মোট ৫৫ হাজার ৮৬ জন গ্রাহক। ইতোমধ্যে পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক লাইন দেয়া হয়েছে ৪০ হাজার ২৯০ জন গ্রাহকের মাঝে। বাণিজ্যিক সংযোগ ৪ হাজার ৯৭৮, শিল্প-কল-কারখানার জন্য ২৪৫ এবং স্কুল কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪ হাজার ৮৪২টিসহ মোট ৫০ হাজার ৩৫৫টি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুতায়নের প্রভাবে কমে যাচ্ছে শহর ও গ্রামের বৈষম্য।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশারেফ হোসেন জানান, সদরের ১৩টি ইউনিয়নে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে এখানে ব্যাপক কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সদর উপজেলায় ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ বিতরনের খবরে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। মহাজোট সরকারের আমলে দ্বীপ জেলায় ব্যাপক বিদ্যুত সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়াতে মানুষের জীবন-মান বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে অবহেলিত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা এগিয়ে চলছে। চরাঞ্চলগুলোতেও আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বিগত কোন সরকারের আমলে এমন উদ্যেগ গ্রহণ না হলেও বর্তমান সরকারকে এমন কাজের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১৬ নং দক্ষিণচর ভেদুরিয়া এম হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই মনে করেন, সরকারের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক বিদ্যুতায়নের ফলে লেখাপড়ার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় কেরোসিন কিনে কুপি বা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করতে হতো। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, বর্তমনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়াতে লেখাপড়া অনেকটাই সহজ হয়েছে। ছেলেমেয়েরা রাত জেগে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিদ্যুতায়নের ফলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফলও ভোগ করছে নতুন প্রজন্ম।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর-চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের শরিফ খা বাজারের ক্ষুদ্র বিক্রেতা ফয়েজ হোসেন ও বারেক আলী বলেন, বিগত দিনে তাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর পরই বাজারের বেচাকেনা শেষ হয়ে যেত। গত কয়েক বছরে এলাকায় বিদ্যুৎ আসাতে অনেক রাত পর্যন্ত হাটের কার্যক্রম চলে। ফলে তাদের আয় রোজগারও বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে।