বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শিশুর বিকাশে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা

441

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশুর বিকাশ-সমাজের ভূমিকা
শিশুর বিকাশে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা
ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : শিলা শাহরিন (৯) ঢাকা শহরের একটি স্কুলের ছাত্রী। খেলাধুলার বিষয়ে তার রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্কুল, কোচিং আর টিউশনের জন্য বাড়িতে সে নিয়মিত খেলার সময় পায় না। তার স্কুলেও খেলার মাঠ নেই। তার বাবা-মা মনে করে খেলাধুলায় অযথা সময় নষ্ট হয় এবং সে পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়বে।
শিলার মত অনেক শিশু খেলাধুলা পছন্দ করলেও পড়ালেখা এবং মাঠের অভাবে খেলার সুযোগ পায় না। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের সচিব এবং প্রাক্তন খেলোয়াড় কামরুন নাহার ডানা বলেন, ‘শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলার মাধ্যমে শিশুর দেহ-মনের পরিবর্তন হয়। এতে শিশুরা অনেক আনন্দ পায়। খেলার মাধ্যমে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাড়ে। কৌতুহল, আত্মবিশ^াস ও সংযমের শিক্ষাও শিশুরা খেলার মাধ্যমে পেয়ে থাকে। শিশুকে তার মত খেলতে দেয়াই ভালো। মাঝে মাঝে তাদের খেলায় বড়রা অংশগ্রহণ করলে তারা অনেক খুশি হয়।’
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল কার্যক্ষেত্রে তার বাস্তব জ্ঞানের ভিত্তিতে কামরুন নাহারকে সমর্থন করে বলেন, ‘শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্ঠিকর খাবার, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, নিয়মিত ঘুম, উদ্বেগমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। অবশ্যই তাদের রোগ প্রতিরোধক টিকা দেয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন নিঃশর্ত ও স্বতঃফূর্ত ভালোবাসা-যতœ এবং মনোযোগ। তাদের মাঝে শৃঙ্খলাবোধ জাগিয়ে তোলা, ব্যক্তিত্বের ভিত গড়ে তোলা এবং সচেতনভাবেই প্রারম্ভিক শৈশব থেকে শিশুর আত্মবিশ^াস ও আত্মমর্যাদার বীজ রোপণ করা ভীষণভাবে দরকার। এমনকি সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশু সহনশীল হতে শিখে।’
চাহিদার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হলে শিশুর পরিবার ছাড়া তার চারপাশ অর্থাৎ সমাজ এবং স্কুলের শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- ‘শিশু অল্পতেই জেদ করে, ভয় পায়। কাজেই খুব ধৈর্য্য ও সহানুভূতি নিয়ে তার আবেগ অনুভুতির প্রতি সাড়া দিতে হবে। এতে সে সুস্থ্য মন ও মানসিক ভারসাম্য নিয়ে বড় হবে। শিশু ঘন ঘন বড়দের কাছ থেকে উৎসাহ ও সম্মতি পেতে চায়। যে কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি তার বিকাশের অন্তরায়। শিশু বড়দের অনুকরণ করে। সুতরাং বড়রা এমন কোনো আচরণ তার সাথে করবেন না, যাতে সে খারাপ আচরণটি দেখে নিজের মাঝে তা রপ্ত করে নেয়। শিশুর বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ সহায়ক বাবা-মা ও শিক্ষক। শিশুর প্রথম বছরগুলোতেই তার স্কুল জীবনের সুশিক্ষার ভিত তৈরি হয়। সুতরাং এদিকেও নজর রেখে বিকাশের ভিত্তি তৈরি করা প্রয়োজন। শিশুর চাহিদাগুলো তার বিকাশের সহায়ক, এই সহায়তা প্রধানত মা-বাবাই দিবেন।’
শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে চাহিদাগুলোর পাশাপাশি তাদের প্রতি বড়দের আচরণও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। কেননা সে তার চারপাশ ও বড়দের দেখেই শিখে থাকে। এক্ষেত্রে বড়দের আচরণ যেমন হওয়া উচিত তা হলো- ‘শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে সে সাধারণত জেদি হবে না। শিশুর মতামত ধৈর্য্য সহকারে শুনে তাকে সঠিকভাবে বোঝালে সে ঠিক বিষযটি বুঝতে চেষ্টা করে। শিশুকে মিথ্যা বলার জন্য তিরস্কার না করে বুঝিয়ে বললে সে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকে। শিশুকে বোঝাতে হবে খেলার সাথে সাথে তার পড়াশোনা কেন করতে হবে। শিশুর প্রতি কোনো রকম কঠিন আচরণ করার আগে নিজের শিশুবেলার কথা স্মরণ করতে হবে। সকল শিশুর প্রতি আচরণ একই হবে। শিশুর কোন কাজ সম্পর্কে সরাসরি সমালোচনা না করে কাজটি সম্পর্কে তাকে ভালো দিক ও মন্দ দিক সম্পর্কে বলতে হবে। বাবা-মার মানসিক কোন চাপ থাকলে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে কেন তার কথাগুলো পরে শুনতে চাচ্ছেন।’
এত কিছুর মাঝে শিশুর প্রতি কোনো ধরনের নির্যাতন হয় কি-না তা খেয়াল রাখার কথাও বললেন শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’-এর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘শিশু যদি কোনভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে সে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে এবং এতে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি ভবিষ্যতে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শিশুকে ইতিবাচকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিলে পরিবার, সমাজ এবং দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। শিশুর বিকাশে আমরা যা জানি তা-ই যথেষ্ট নয়, আমাদের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন এবং এর প্রচারণার দিকেও জোর দেয়ার কথা জানান ডা. মোহিত কামাল এবং রোকসানা সুলতানা।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/শামো/আসচৌ/আহো/০৯০৫/এসএইচ