বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : ডেঙ্গুতে নারী ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি

130

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
ডেঙ্গু-মৃত্যু
ডেঙ্গুতে নারী ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি
ঢাকা, ১৩ সেপ্টম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নারীদের ক্ষেত্রে অসচেতনতা ও ঋতুচক্রে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এবং শিশুদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকাই কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি থাকলেও সরকারের নানামুখি পদক্ষেপে আস্তে আস্তে ডেঙ্গুতে আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। এর ফলে ডেঙ্গু নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তাও কমতে শুরু করেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ডেথ রিভিউ কমিটির তথ্য অনুয়ায়ী, (বর্তমান বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৫, জুলাইয়ে ২৮, আগস্ট মাসে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুর হারও সর্বোচ্চ। মৃত ৬০ জনের মধ্যে ২৪ জন শিশু। শতকরা হিসেবে যা ৪০ শতাংশ। মোট মৃত ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ছাত্র ৩৭ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৫ শতাংশ, হোম মেকার ১৩ শতাংশ, চাকুরিজীবী ৩৭ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার ৪ শতাংশ।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, এবছর ডেঙ্গুতে আক্রন্ত হয়ে ১ জন (১ থেকে ৪ বছর), ৮ জন (৫ থেকে ১৪ বছর), ৬ জন (১৫ থেকে ২৪ বছর), ১২ জন (২৫ থকে ৩৪ বছর), ১১ জন (৩৫ থেকে ৪৪ বছর), ৩ জন (৪৫ থেকে ৫৪ বছর), ৪ জন (৫৫ থকে ৬৪ বছর) এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ১ জন মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত আইইডিসিআরের কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ১৯২টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৬০ টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে কমিটি।
নারী ও শিশুদের বেশি মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাসসকে বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে নারী ও শিশুরা বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় কম। তাছাড়া নারীরা দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ার কারণেও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, চলতি বছর ৫ থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত রোগী সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগে আক্রন্ত হয়েছে। এরা হচ্ছে মোটামুটি ৭০ ভাগের বেশি। এই গ্রুপটাই অ্যাকটিভ গ্রুপ। এদের মধ্যে আবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা। কারণ এরা শিক্ষার্থী। স্কুল-কলেজে যায়। অর্থাৎ স্কুল ও অফিসগামী মানুষই ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
আইইডিসিআর-এর গবেষয়ণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, এ বছর যারা তাদের মধ্যে ৬ শতাংশ (১ থেকে ৪ বছর), ২০ শতাংশ (৫ থেকে ১৪ বছর), ২৬ শতাংশ (১৫ থেকে ২৪ বছর), ১৯ শতাংশ (২৫ থেকে ৩৪ বছর), ১৩ শতাংশ (৩৫ থেকে ৪৪ বছর), ৯ শতাংশ (৪৫ থেকে ৫৪ বছর), ৪ শতাংশ (৫৫ থেকে ৬৪ বছর) এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ মাত্র ৩ শতাংশ ডেঙ্গু রোগে আক্রন্ত হয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত পুরুষ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মোট রোগীর ৫৯ শতাংশ পুরুষ। বাকি ৪১ শতাংশ নারী। পুরুষ রোগীদের মধ্যে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ ও শিশু। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় গৃহিণীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কম। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হলেও বেশি মারা যাচ্ছে নারী ও শিশু।
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তের আগে ও পরে বাড়িতে থাকা অবস্থায় শিশুকে যে পরিমাণ তরল খাবার দেয়ার কথা তা শিশু গ্রহণ করে না। এটি শিশুর অনীহার কারণেই হয়ে থাকে। ফলে পানিশূন্যতা অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন শিশুর শরীরে ফ্লুইডের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর ভাইরাসের সঙ্গে শিশুরা পেরে উঠে না।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/বিকেডি/স্বব/আহো/১৬৪৫/এসএইচ