কমিউনিটি পুলিশিং-এ গুরুত্ব দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

725

ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি পুলিশিং-এর ওপর গুরুত্ব দিতে পুুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টার ওপর আমরা জোর দেব যাতে করে ভবিষ্যতে মানুষের সেবা করা এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশিং-এ আমরা জোর দিচ্ছি এবং আমি বলবো প্রায় সব ক্ষেত্রেই কমিউনিটি পুলিশিং-এ আরো জোর দেয়া উচিত।’
‘কারণ হচ্ছে-কমিউনিটির লোকজন যদি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে ঐ অঞ্চলে অপরাধের হার (ক্রাইম) এমনি কমে যাবে।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি এ সময় দেশে চলমান মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পুলিশ ও থানাগুলোর ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
শেখ হাসিনা আজ সকালে পুলিশের দীর্ঘদিনের দাবি ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’র বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকটির উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির লক্ষ্য বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্যদের কাছে পৌঁছানো এবং উদ্ভাবনী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা।
সরকার প্রধান বলেন, অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় জন প্রতি পুলিশের অনুপাত বাড়াতে কমিউনিটি পুলিশিংকে যদি জোরদার করতে পারি তাহলে আরো বেশি মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু বাধা আসে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন আসে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ ও আসে। আর এসব দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করি, যেখানে পুলিশ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, এই দুর্যোগ মাঝে মাঝে এমন আত্মঘাতী হয়, যা দেশের জন্য ক্ষতির সৃষ্টি করে। এছাড়া সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদতো রয়েছেই যেখানে আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে এবং মানুষের জীবনের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
তিনি এ সময় আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ এবং ১৫ সালে বিএপি-জামায়াতের সন্ত্রাস এবং গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশকে আরো দক্ষভাবে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার এন্টি টেরোরিজম ইউনিট এবং সাইবার ক্রাইম দমনে সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করেছে এবং যেগুলো অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উন্নয়নসহ শিল্প পুলিশ, পিবিআই, টুরিষ্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং বিভিন্ন স্পেশাল পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করেছে।
এদের বিরুদ্ধ অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তাকে আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে।
তিনি বলেন, একে আরো বাড়াতে হবে এই কারণে যে, মাদক এক একটা পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি মাদকের জন্য ছেলে মাকে মেরে ফেলে, ভাই ভাইকে মেরে ফেলে, বাবাকে মেরে ফেলে। কাজেই এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আরো বেশি করে মাদক বিরোধী অভিযান করতে হবে।
পুলিশের তাৎক্ষণিক সেবা প্রাপ্তির জন্য তাঁর সরকারের টোল ফ্রি ‘৯৯৯’ এ কল সার্ভিস চালুর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশ খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এইজন্য মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি এ সময় পুলিশের জন্য ঝুঁকি ভাতা চালু, প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা, চাকরি ক্ষেত্রে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুবিধা তুলে ধরেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. মুস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি বাংলাদেশ কমিউনিটি ব্যাংকের বিষয় ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুইয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিদায়ী কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এবং কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে পুলিশে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতের মত ঘুষ দুর্নীতি এবার না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে এই দৃষ্টান্ত অন্যদেরও অনুসরণের আহবান জানান।
তিনি বলেন, সাধারণত পুলিশে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে চিরদিনই, শুধু পুলিশ কেন সর্বক্ষেত্রেই নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা ঘুষ-দুর্নীতির বদনাম রয়েছে। সেখানে এবার পুলিশ ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঘুষ-দুর্নীতিমুক্তভাবে এবার যেভাবে পুলিশে নিয়োগ হয়েছে তাতে অতি সাধারণ ঘরের ছেলে-মেয়েরাও চাকরি পেয়েছে। সেজন্য তিনি বিশেষভাবে পুলিশবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে যারা এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে একটা বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমার মনে হয়, এটা সকলকেই অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলবো অন্যরাও এক্ষেত্রে বিষয়টি অনুসরণ করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। তাহলে সাধারণ মানুষগুলো কাজের সুযোগ পাবে।’
তাঁর সরকার প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব প্রদান করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি এবং এই ট্রেনিংটা আরো বাড়াতে চাই।
তিনি কিছু সময় পর পরই পিরিয়ডিক্যালি এই ট্রেনিং অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের যেহেতু প্রতি নিয়ত ধরণ বদলাচ্ছে সেকারণে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তাৎক্ষণিক ভাবে কখন কি করা দরকার সে বিষয়ে পুলিশ বুঝতে পারবে।
তিনি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারসহ সারাদেশে ৩০টি ইন সার্ভিস সেন্টার স্থাপনেও সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আরো চারটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রত্যেক জেলায় পুরনো যে থানাগুলো রয়েছে সেগুলোসহ এবং উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সব থানার উন্নতির জন্য অনেকগুলো প্রকল্প আমরা ইতোমধ্যেই পাশ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, থানাগুলোর অবস্থা এমন হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যেন পুলিশ অর্জন করতে পারে। কারণ, মানুষের সেবা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি থানাকে দর্শনীয় ও সুন্দর হতে হবে এবং এগুলো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হিসেবে তৈরী হবে।
তিনি এ সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে থানাগুলোর দুরাবস্থার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন-কোথায় কোথায় থানার দুরবাবস্থা রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করে তাঁর কাছে নিয়ে আসার জন্য। যাতে তিনি এই প্রকল্পগুলো দ্রুত পাশ করে দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কাজ করবেন তাঁদের বিশ্রামের, থাকার, নিরাপত্তার, অস্ত্র ও গাড়ি রাখার ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে থাকতে হবে। তাহলে আপনারা অরো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
তাঁর সরকারের সময়ে দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে আকাঙ্খা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই আকাঙ্খা পুরণের লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
দেশের এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব এবং আন্তর্জাতিক ভাবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি। ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে পারবো।
এসময় তাঁর সরকারের ২১০০ নাগাদ গৃহীত ডেল্টা পরিকল্পনারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন পরিকল্পিতভাবে হয় সেজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, অর্থনতিক উন্নতি জন্য দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা। আর এই শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের ওপরই বর্তায়। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সেভাবেই পালন করে যাবেন। যাতে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং আগামী প্রজন্ম একটা সুন্দর জীবন পায়।