বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ উৎপাদন করছে জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড

243

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
থ্যালাসেমিয়া-প্রতিকার
থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ উৎপাদন করছে জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড
ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : মাঠের এক পাশে উদাস মনে বসে আছে তের বছর বয়সী রাফি। চোখ মাঠে খেলতে থাকা প্রায় তারই সম বয়সী বাচ্চাদের দিকে হলেও মনে হচ্ছে সে আসলে কিছুই দেখছে না। কেন সে বাচ্চাদের সাথে খেলছে না- কাছে গিয়ে জানতে চাইলে রাফি প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তারপর আস্তে করে বলে, আমি দৌঁড়াতে পারি না। অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই। তখন মনে হল আসলেই তো রাফিকে কেমন জানি রোগা মনে হচ্ছে। কারন জানতে চাইলে বলে-তার থ্যালাসেমিয়া। তিন মাস পর পর রক্ত দিতে হয়। ডাক্তার বেশি দৌড়-ঝাঁপ করতে নিষেধ করেছেন।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন -ই বাহক রোগে আক্রান্ত এবং দেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. ওয়াকার এ খান বলেন, থ্যালাসেমিয়া মূলত জন্মগত রক্ত ঘাটতিজনিত একটি রোগ, যা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে এবং তাদের দুর্বল করে দেয়। যদি বাবা এবং মা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া রোগটি বহন করে তবে তাদের বাচ্চাদের থ্যালাসেমিয়া রোগের মাত্রা বেশী থাকে। তবে থ্যালাসেমিয়া বহন করে এমন দু’জন নারী এবং পুরুষ যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হন তবে বাচ্চার ক্ষেত্রে এ রোগ অনেকটা প্রতিহত করা যায়।
তিনি বলেন, এ রোগের ফলে রক্তের লাল সেলটি নষ্ট হয়ে যায় এবং তা অনেক সময় এ্যানিমিয়াতে রূপ নেয়। এর ফলে শিশুরা অক্সিজেন কম গ্রহণ করতে পারে। কারণ তার শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিনের অভাব হয়। এতে করে শরীরে আরো নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধে।
ডা. ওয়াকার বলেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা যে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে না- তা কিন্তু নয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত একজন শিশু অ্যানেমিয়ায় ভোগে এবং শিশুটি শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে। শিশুটি অন্য সুস্থ বাচ্চার মত খেলাধুলা করতে পারে না এবং প্রায় সময় শিশুটি শ্বাস কষ্টে ভোগে। লিভার এবং প্লীহা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে অস্থি মজ্জা ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে পুরোপুরি এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এ চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তাঁর মতে থ্যালাসেমিয়া রোগ বহন করে এমন ব্যক্তি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া অথবা বিয়ে করলেও যেন তারা সন্তান ধারণ না করে। তবেই নতুন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য বিয়ের আগে নারী এবং পুরুষ উভয়ের অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। যাতে করে আগে থেকেই যেন বুঝা যায় কেউ এ রোগ বহন করছে কিনা।
এদিকে দেশে প্রথম বারের মত থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ উৎপাদন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জুলফারের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড
জুলফার বাংলাদেশ এর সিইও সেলিম সোলায়মান বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশে থাকার অংশ হিসেবে আমরা বাংলদেশে প্রথমবারের মত আয়রণ চিলেটর হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধ ডেফেরাসিরক্স চিলোভা উৎপাদন শুরু করেছি।
এছাড়াও বাংলাদেশের সকল সরকারি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে ব্লাড টেস্ট করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মূলত অসেচতনতার কারণে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ যদি একটু সচেতন হয় তবে বাংলাদেশে এ রোগের সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
তিনি বলেন, রোগটির চিকিৎসা আসলেই অনেক ব্যয়বহুল। তিনি গরীর রোগীদের চিকিৎসার জন্য ধনী ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/আহো/১০৫০/এসএইচ