বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : সমস্যা সমাধানে জরুরি সেবার নাম ‘৯৯৯’

263

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
জরুরী সেবা-৯৯৯
সমস্যা সমাধানে জরুরি সেবার নাম ‘৯৯৯’
ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : প্রায় প্রতিদিনই শারিরীক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন মিরপুর-২ এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম (ছদ্মনাম)। স্বামী আনোয়ার খান রাতে বাসায় ফেরার কিছুক্ষন পর থেকেই মারধর শুরু করেন। এভাবেই চলছিল। হঠাৎ একদিন নাজমাকে মারধরের মাঝখানে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। আনোয়ার দরজা খুলেই দেখেন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। নারী নির্যাতনের জন্য গ্রেফতার করা হয় আনোয়ারকে।
কিন্তু পুলিশে কে খবর দিল তা কেউই বুঝতে পারছিল না। এমনকি নাজমাও অবাক। পরে জানা যায়, প্রতিবেশী কলেজ পড়–য়া এক মেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে নাজমার নির্যাতনের কথা জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন আনোয়ারকে। তবে মেয়েটির অনুরোধে কারো কাছেই তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বয়ারমারি পর এলাকার এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী মাঠে গিয়েছিল ধান কাটতে। সেখানেই আমজাদ আলী নামে এক নরপশু ঘাস কেটে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন করে কিশোরীকে। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করে তারই এক প্রতিবেশী। সাথে সাথে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশকে খুলে বলে সব ঘটনা। ফোন পাওয়ার মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত আমজাদ আলীকে। পরে ওইদিন রাতেই থানায় ধর্ষন মামলা করে কিশোরীর ভাই।
গোদাগাড়ী থানা পুলিশ জানায়, ওই কিশোরী সেদিন মাঠে ঘাস কাটার জন্য যায়। পরে ঘাস কেটে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে তাকে ধর্ষন করে অঅমজাদ আলী। এ সময় কিশোরী চিৎকার করলে আশপাশের স্থানীয়রা এগিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকেই আমাদের একজন ফোন করলে আমাদের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
গোদাগাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলে। কিন্তু মীমাংসা করতে রাজি হয়নি কিশোরীর পরিবার। পরে বিষয়টি জানান নির্যাতিত কিশোরীর এক স্বজন। এরপর পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি ডেস্ক থেকে বিষয়টি গোদাগাড়ী থানায় অবহিত করা হয়। খবর পেয়েই ওই কিশোরীর বাড়িতে যায় পুলিশ। তারা কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে আমজাদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতেই থানায় মামলা করেন ওই কিশোরীর ভাই।
মূলত এ সবই সম্ভব হয়েছে দেশে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে, ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে। সরকারের একাগ্রতায় বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল দেশে পরিনত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা ও প্রত্যয় অনুযায়ী আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও। কেবলমাত্র জরুরী সেবা ৯৯৯এর মাধ্যমে নারী নির্যাতন কিংবা একক সমস্যার সমাধান হয় তা নয়। মানুষের জীবনে একান্ত প্রয়োজনীয় অনেক সমস্যার সমাধানই করছে এ সেবাটি।
২০১৫ সালের অক্টোবরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ প্রথম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে। ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে জনগণকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি সেবা প্রদানে ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সার্ভিসটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় সেবাটি। মুঠোফোনে ব্যালেন্স না থাকলেও ৯৯৯-এ ডায়াল করে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি ডেস্কে কথা বলে নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারেন যে কেউ।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/স্বব/আহো/১৮২৫/এসএইচ