বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : নারীরাও এখন অ্যাপসভিত্তিক যাতায়াত সেবা নিচ্ছেন

118

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
নারীরাও এখন অ্যাপসভিত্তিক যাতায়াত সেবা নিচ্ছেন
ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : রাজধানীর মতিঝিল এলাকার একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন শারমিন জাহান আজ প্রায় ১০ বছর ধরে। বাসা মোহাম্মদপুর এলাকায়। সকাল দশটায় অফিসে পৌঁছাতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু বাসা থেকে যখন বের হন তখন গাড়ী তো দূরের কথা, সিএনজি-চালিত অটো-রিকশাও খুঁজে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও ভাড়া চায় অনেক বেশি। অনেক সময় কিছু না পেয়ে শেয়ারে সিএনজি ভাড়া করে আসতে হয় অফিসে। আবার কখনো কয়েকটা রিকশা পাল্টে অফিসে আসতে হয় শারমিনকে। গত কয়েক মাস ধরে এখন আর সেসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না তাকে। অফিসের এক জুনিয়র সহকর্মী তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে মোবাইলে অ্যাপস ব্যবহার করে মোটর সাইকেল, সিএনজি অথবা কার নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায়। এখন শারমিন ‘পাঠাও’ ‘উবার’ এবং ‘ও ভাই’ এই তিনটি অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা নিচ্ছেন।
তিনি জরুরী মূহুর্তে বিশেষ করে অফিসে আসার সময় এবং অফিস থেকে যাওয়ার সময় এর যেকোন একটি ব্যবহার করেন। শারমিন বলেন, অনেকদিন ধরেই বেশ কষ্ট পাচ্ছিলাম। চাকরিটা ভালো হওয়ায় ছাড়তেও চাইছিলাম না। যদিও অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম যে, আর চাকরি করব না। প্রতিটা দিন আসা-যাওয়াতে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হতো। প্রায় সময়ই লোকাল বাসগুলোতে উঠতে পারতাম না। আবার সিএনজি করে গেলেও অনেক টাকা ভাড়া লাগত। অফিস থেকে ফেরার সময়ও একই ঘটনা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ভোগান্তি অনেকটা কমেছে। টাকা একটু বেশী গেলেও আমি প্রায় সময় অ্যাপস ব্যবহার করে মোটরবাইক ডাকি। এর ফলে আমার সময়ও কিছুটা বেঁচে যায়।
নগরীর বাংলামোটর এলাকায় এক প্রাইভেট ফার্মে কাজ করা রুবাইদার ঘটনাও অনেকটা শারমিনের মত। বাসা মুগদা এলাকায়। তিনি বলেন, প্রায় দিনই আমি গাড়ীতে উঠতে পারতাম না। আর আমার এখানে সকালের দিকে তেমন কোন বাসও দাঁড়াতো না। অফিস টাইম হওয়ায় খিলগাঁও, বাসাবো আর বুদ্ধ মন্দির এলাকা থেকেই প্রায় সব গাড়ী প্যাসেঞ্জারে ভরে যেত। আর তাই এখানে সকাল বেলা তেমন কোন গাড়ী দাঁড়াত না। যদিওবা দু’/একটি থামতো, সেসব গাড়ীতে যুদ্ধ করে উঠতে হতো। আবার সকাল বেলা রিকশা ভাড়াও অনেক বেশী। ফলে প্রায় সময়ই অফিস পৌঁছাতে আমার দেরী হয়ে যেত। কিন্তু আমার নিজেরই খারাপ লাগত।
তিনি বলেন, এখন আর সেসব ঝামেলা পোহাতে হয় না। আমি এখন ‘পাঠাও’ অথবা ‘উবার’এর অ্যাপস ব্যবহার করি। মোটর সাইকেল একেবারে বাসার নিচে চলে যায়। আর আধ-ঘন্টার মধ্যে আমি অফিসে পৌঁছে যাই।
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন চব্বিশ ঘন্টা মনিটরিং করে অ্যাপস প্রতিষ্টানগুলো। কোন রাস্তায় কিভাবে আছে। সব মনিটরিং করা হয়। তবে এ পর্যন্ত ড্রাইভারদের কাছ থেকে কোন অশালীন আচরণ পাইনি। আর পেলেও অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে। ফলে খুব একটা অসুবিধা হয় না বলে জানান তিনি।
এসব অ্যাপস ব্যবহার করা আরেক নারী কর্মজীবি সুলতানা পাশা বলেন, একজন অপরিচিত পুরুষের পেছনে বসে মোটর সাইকেলে যাবেন…বিষয়টি তার কেমন যেন লাগছিল। কিন্তু একদিন গাড়ীতে দীর্ঘক্ষণ উঠতে না পেরে মোবাইলে ডাক দিলেন এক মোটর সাইকেল ড্রাইভারকে। ভাড়াও তুলনামূলক কম। অন্তত সিএনজির চেয়ে অনেক কম। সাহস করে চলেও আসলেন অফিসে। এখন তিনি আর গাড়ীর জন্য বসে থাকেন না। প্রতিদিন অফিসে আসার এবং অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় ব্যবহার করছেন অ্যাপসভিত্তিক যাতায়াত সেবা।
তিনি বলেন, শুরুতে খুবই সংকোচ লাগতো। কিন্তু কয়েকদিন ব্যবহার করার পর থেকে খুবই ভালো লাগছে। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত নারীদের গাড়ীতে উঠতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। আর অফিস টাইমে তো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ী পাওয়া যায় না। গাড়ী আসলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আবার ঠেলাঠেলি করে উঠলেও অনেক অযাচিত স্পর্শের সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের। আর অধিকাংশ বাসের হেল্পারদের আচার-আচরন খুবই নোংরা। অন্যদিকে এসব অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবায় কোন ধরনের ঝামেলা নেই। খুব দ্রুত গাড়ী পাওয়া যায়। আর মোটর সাইকেল-এ খুব দ্রুত অফিস পৌঁছে যাওয়া যায়।
আবার খরচও অনেক কম। বিভিন্ন সময় ডিসকাউন্টের অফার থাকেই। এমনকি বেশ কয়েকবার ৩০ থেকে ৮০ টাকা দিয়ে অফিস পৌঁছে গেছি। আর সিএনজিতে এই ভাড়া নেয় সর্বনিম্ম দুইশ টাকা। আর সকাল বেলা বিশেষ করে অফিস টাইমে তো সিএনজি যেনো সোনার হরিন।
উবার এর একজন মোটর সাইকেল চালক ইসমাইল হোসেন জানান, প্রথমে তাদের মোবাইল নাম্বার, ভোটার আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে হেড অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সেসব প্রশিক্ষণে রাস্তায় গাড়ী চালানোর বিভিন্ন নিয়ম-কানুনসহ যাত্রীদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শেখানো হয়। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের সাথে আমাদের ব্যবহার কেমন হবে তার বিষয়ে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়। তারপরও কিছু কিছু অঘটন ঘটে যায়। এক্ষেত্রে যাত্রীরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন অ্যাপসের মাধ্যমে। বিশেষ করে নারী ঘটিত যে কোন বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয় এখানে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠান।
সূত্র মতে প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী বর্তমানে এসব অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা গ্রহণ করছেন।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/-আসচৌ/আহো/১৬৫৮/-এসএইচ