বাজিস-৬ : নওগাঁয় সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ২১১ বাড়ি নির্মাণ

145

বাজিস-৬
নওগাঁ- বাড়ি নির্মাণ
নওগাঁয় সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ২১১ বাড়ি নির্মাণ
নওগাঁ, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় কাবিটা ও টি আর কর্মসূচির বিশেষ খাতের আর্থিক সহায়তায় ২১১টি পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এ জেলায় এ প্রথম ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের উদ্যোগে অস্বচ্ছল, হতদরিদ্র, গৃহহীন, নদীভাঙ্গনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে গৃহহারা, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলা প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এসব বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, নওগাঁ সদর উপজেলায় ২০টি, পোরশা উপজেলায় ২৪টি, সাপাহার উপজেলায় ২৩টি, নিয়ামতপুর উপজেলায় ২২টি, পতœীতলা উপজেলায় ২১টি, ধামইরহাট উপজেলায় ১৯টি, বদলগাছী উপজেলায় ১৭টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৮টি, মান্দা উপজেলায় ১৭টি, রানীনগর উপজেলায় ১৫টি ও আত্রাই উপজেলায় ১৫টিসহ সর্বমোট ২১১টি বাড়ি নির্মাণ কাজ চলছে। বাড়িগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে হবে, কাঠের দরজা-জানালা, অত্যাধুনিক রঙিন টিনের ছাউনি, ১০ ফিট লম্বা ও ১০ ফিট আয়তনের ২ কক্ষের বাড়ি। সাথে সংযুক্ত থাকবে একটি রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্বত স্যানিটারি ল্যাট্রিন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানের দুর্যোগ প্রতিরোধী এমন বাড়ি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে সরকারের খরচ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা।
নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নামানুরপুর গ্রামের শারিরীক প্রতিবন্ধী আলেয়া বেওয়া (৫০) বলেন, নিজের সামান্য জমি থাকলেও ঘর বানানোর সামর্থ নাই। বেঁেচ আছি প্রতিবন্ধী ভাতা আর গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে। জন্ম থেকেই ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস করে আসছি। সরকারী খরচে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি পাওয়ার শেষ জীবনটা হবে সুখের, নতুন বাড়িতে ভালো ভাবে থাকতে পারবো।
একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের ভিক্ষুক আব্দুল জব্বার (৭৫) বলেন, অনেকদিন আশ্রয়হীন ছিলাম, ভিক্ষা করে দিন কাটতো। ঝড় বৃস্টি মাথায় নিয়েই বৃদ্ধ হয়েছি। বয়সের ভাড়ে এখন আর চলতে পারিনা। মানুষের দয়া আর দানের উপর কোন মতে বেঁচে আছি। সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আমার সামান্য জমিতে নতুন বাড়ি তৈরী হচ্ছে, শেষ বয়সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারবো।
নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদরের নিতপুর গ্রামের ছিন্নমুল বাদাম বিক্রেতা ফিটি (৭০) বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করা সামান্য টাকা আর বাদাম বিক্রি করে আমার দিন চলে। সংসারে আপন বলে কেউ নেই। কোন রকমে টিনের ছাপড়ার নিচে বসবাস করছি। বৃষ্টিতে ভিজে, প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে কনকনে শীতে না ঘুমিয়ে জীবন যাপন করে আসছি। পৈত্রিক সুত্রে সামান্য জমি আছে। কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ নাই। সরকারী টাকায় পিআইও অফিস ঘর তৈার করে দিচ্ছে। এটাই আমার কাছে রাজপ্রসাদ। ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি। সরকারি সহযোগিতায় নতুন বাড়ি পেয়ে জীবনের শেষ সময়ে যে কয়টা দিন বেঁচে থাকবো ভালো থাকবো।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়ার আব্দুল গফুর সরদার (৬০), রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হরিষপুর গ্রামের লতিফুল বেওয়া (৬৫), আতাইকুলা গ্রামের আম্বিয়া বেওয়া (৬৫) ও খট্টেশ্বর ইউনিয়নের পরিশচম বালুভরা গ্রামের ফরিদা বিবি (৫২) দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেয়েছেন। তারা বলেন, কোন দিন পাকা ঘরে থাকার স্বপ্নও তারা দেখেননি। কিন্তু বর্তমান সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসুচির আওতায় তারা পাকা ঘর পেয়ে বেজায় খুশি। তাদের সামান্য জমিতে সরকার ঘর করে দেয়ায় স্থায়ী আশ্রয় পেয়েছেন বলে জানান।
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় ২১১টি পরিবারের মধ্যে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়েছিলো। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ ৫০ হাজার ৪১ টাকা। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও রান্নাঘর সুবিধাসহ এসব বাড়ি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত প্রতিরোধে সক্ষম। কোন মানুষ যেন বাস্তুহারা না থাকে সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুণ অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনব ও চমৎকার একটি কর্মসূচি। দারিদ্রতা থেকে উত্তোরণের জন্য এবং হতদরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আর এ কারণে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণায়নের কাবিটা ও টিআর কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থে এ ঘর গুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কর্মসুচিতে গ্রামের অসচ্ছল, হতদরিদ্র, ঘরহীন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলা, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে পাবে দুূর্যোগ সহনীয় ঘর পাবে। এ কর্মসূচির মূূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, গ্রামের এ পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা।
বাসস/সংবাদদাতা/১৩০০/নূসী