বাজিস-৩ : চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সম্পর্কে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

152

বাজিস-৩
চাঁদপুর-গ্রাম আদালত
চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সম্পর্কে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত
চাঁদপুর, ২৫ জুন, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় গ্রাম আদালত সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা শীর্ষক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রাম আদালত বিষয়ক পরামর্শ সভায় চাঁদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ- পরিচালক মো: মইনুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো: মাজেদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মতলব সার্কেল রাজন কুমার দাস। জেলা কৃষি কর্মকর্তা আলি আহমেদ।
গ্রাম আদালত বিষয়ক পরামর্শ সভায় বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ চাঁদপুর এর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস জানান, চাঁদপুরের ৪৪ গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফি তে ১১৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গ্রামের নারী, দরিদ্র ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যকার বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ে, স্বল্প খরচে ও স্বচ্ছতার সাথে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে চাঁদপুরের ৫ উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নে চলছে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম।
মাত্র ১০ টাকা ফি দিয়ে আবেদনকারী (বাদী) ও প্রতিবাদী (বিবাদী) এ আদালতে চুরি, ঝগড়া বিবাদ, কলহ মারামারি, প্রতারণা, হুমকি, নারীর শ্লীলতাহানী, বল প্রয়োগে কাউকে জখম, ইভটিজিং, পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত অবৈধ দখল থেকে সম্পত্তি উদ্ধার, গবাদি পশু চুরি কিংবা মেরে ফেলা, গবাদি পশু কর্তৃক ফসল বিনষ্ট, কৃষক-শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি আদায় সংক্রান্ত ইত্যাদি মামলা ৩ মাসের মধ্যে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে।
এসব ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের বিরোধীয় যে ইউনিয়নে মামলা হবে, সে ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি করতে পারবে। গ্রাম আদালতে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও উভয় পক্ষ প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারবে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ‘বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’। চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা শীর্ষক পরামর্শ সভায় সরকারি-বেসরকারি মোট ৫০ জন কর্মকর্তা অংশ গ্রহণ করেন। এখানে চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ চলমান ৫টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, এনজিও প্রতিনিধি, ও জেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা পরামর্শ সভায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ চাঁদপুর এর ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস জানান, ২০১৬ থেকে শুরু হওয়ার এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৭ জেলার ১০৮০ ইউনিয়নে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৯৫৮ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। চাঁদপুরের পরিসংখ্যানে ৮ উপজেলার মধ্যে ৫ উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয় রয়েছে বলে জানানো হয়। এরমধ্যে মতলব দক্ষিণে ৪, মতলব উত্তরে ৮, ফরিদগঞ্জে ১০, শাহরাস্তিতে ১০ ও কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। তিনি আরো জানান চাঁদপুর জেলায় এই পর্যন্ত ৪৪ টি গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফি তে ১১৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। মোট মামলা হয়েছিলো ১৩৪৫ টি। সমাধানের হার ৮৪%।
এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদেরকে এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বিচারকি এজলাস তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকারি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। অর্থায়ন করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন।
উন্মুক্ত আলোচনায় গ্রাম আদালতের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা অনেক নতুন নতুন পরামর্শ তুলে ধরেন। যাতে করে গ্রামের অসহায় মানুষ গুলো সরকারের এ সুন্দর উদ্যোগটির সুফল সরাসরি পেতে পারে। সকল কর্মকর্তারা জনগণের ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা গুলো দূর করার উপর জোর দেন এবং বিচার প্রার্থীর ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয় সেই বিষয় গুলো বিশেষ দৃষ্টি রাখার উপর জোর দেন। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যা হয়ে থাকে তা দূর করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের উপর ও জোর দেন। এবং গ্রাম আদালতের বিষয়ে আরো প্রচারনা চালানোর উপর আলোচনা করা হয়।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১৪০০/নূসী