বাজিস-২ : মেহেরপুরে কুমারদের তৈরি পণ্যের চাহিদা দেশ জুড়ে

294

বাজিস-২
মেহেরপুর -কুমারদের তৈরি পণ্য
মেহেরপুরে কুমারদের তৈরি পণ্যের চাহিদা দেশ জুড়ে
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের পাল বাড়ির তৈরি মাটির তৈজসপত্রের কদর আছে দেশ জুড়ে। এঁটেল মাটি দিয়ে তাদের তৈরি হাঁড়ি, তাওয়া, মালসা, পানির কলস, ফুলের টব, ফুলদানি দেব- দেবীর মূর্তিসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন তৈজস প্রত্রর কদর শুধু মেহেপুরের জনপদের মানুষের কাছে নয় সারা দেশের মানুষের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা। কালের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তির উৎপাদিত অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিকের সাথে প্রতিযোগিতা করে এখনও প্রায় শ‘খানেক বংশ পরম্পরার পেশা আঁকড়ে আছেন ।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়কে ৫ কিলোমিটার দূরের আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রাম। এ গ্রামের নারী-পুরুষ সকলেরই কাঁদা-মাটির গন্ধমাখা শরীর। এদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় মাটির নানা তৈজসপত্র। মাটির হাঁড়ি, সরা, ভাড়, কলস, রসের ঠিলি, তাওয়া, নান্দা, ফুলের টব, দেব- দেবীর মূর্তিসহ আরো কত কিছু। প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়াম সাথে প্রতিযোগিতায় তাদের তৈরি তৈজসপত্রের মান ও চাহিদা এখনও সমান তালে।
বয়সের ভারে ক্লান্ত চাঁদবিলের বিষ্ণু পাল। আজও বাপ-দাদার পেশা নিয়ে বেঁচে আছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন নানা তৈজসপত্র। তিনি বলেন, ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি সেখানে বসবাস করছেন এবং মাটির মায়ায় জড়িয়ে আছেন। নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন বিভিন্ন তৈজসপত্র । আর এসব তৈজসপত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার ক্রেতারা।
বাড়ির উঠানে লাগানো পেয়ারা গাছের তলে জগন্নাথ পালের স্ত্রী সমিতা পালের সাথে কথা হয়। তার ভাষায় সেই ছোট্টাকালে বাবা-মার দেখাদেখি কাদা-মাটি দিযে গড়া পেশার সাথে জড়িয়ে আছি। রাত-দিন কাদা মাটির কাজ করে মাটির মানুষ হয়ে আছি। কাদাহাত ধুয়ে কখনো দোড়–তে হয় চুলো (চুলা) পাড়ে। পেটের জ্বালা মেটাতে চুলো জ¦ালিয়ে রান্নার সাথে সংসারে ৬ মেয়ে ২ ছেলের রান্না করতে হয়। সমিতা জানান- এ পেশা থেকে তিনি দু’বিঘা জমি কিনেছেন, পাকা দালান গড়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া করাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগে মাটি এমনিই পাওয়া যেতো। এখন মাটি কিনতে হয় বলে তাদের উৎপাদিত সামগ্র্রীর দাম কিছুটা বৃদ্ধি বেড়েছে। সৌখিন পরিবারগুলোতে এসব পণ্যের চাহিদা আছে।
প্রবীণ কুমোর হিসেবে পরিচিত হৈমন্তি পাল ও তার স্ত্রী কাবরুলী বালা এখনও এ পেশায় নিয়োজিত। ছেলে জিতেন গ্রামে কাজ করার পাশাপাশি এ কাজ করে। হৈমন্তি পাল মাটির পাত্র তৈরি করেন আর আধা শুকনো হলে তাতে নানা রকমের নকশা করেন স্ত্রী কাবরুলী বালা। এদের কাজে নিপুণতা ও সৌন্দর্য আছে। তাদের ডোরাকাটা ফুলের টবের চাহিদা আছে। তাদের তৈরী টব ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে লোক এসে কিনে নিয়ে যায় তাদের জেলায় বাজারজাতের জন্য।
গ্রামের নবিন পাল জানান, মাটির তৈরি অন্যান্য জিনিসের পাশা পাশি বেড়েছে পোড়া মাটির রিং এর চাহিদা। স্বল্প খরচে ভুগর্বস্থ ট্যাংক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এ রিং দিয়ে। যেখানে ইট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে একটি ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। সেখানে রিং দিয়ে সমপরিমাণ ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। যার কারণে মানুষের কাছে রিংয়ের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।
আমঝুপি ইউনিয়নের প্রবীন ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বাবলু বলেন- আমঝুপির চাঁদবিল গাঁয়ের কুমোরদের তৈরি সামগ্রী এলাকায় যথেষ্ট চাহিদা। মানও ভাল। এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ গ্রামে এসে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে। তিনি আরো বলেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, এসব কুমারদের চাহিদা সম্পন্ন-পোড়া মাটির সরঞ্জাম তৈরির প্রশিক্ষণ এবং বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা গেলে এ কুমারদের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে এবং এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লতিফন নেছা লতা বলেন- চাঁদবিল গ্রামের কুমারদের তৈরি মাটির জিনিসের কদর দেশজুড়ে। তারাদের যেন এ পেশা টিকিয়ে রাখতে পারে সে জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১-১৮/নূসী