বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : শিল্প কারখানা স্থাপনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হোন : প্রধানমন্ত্রী

146

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-রপ্তানি ট্রফি-ভাষণ
শিল্প কারখানা স্থাপনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হোন : প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বৈদেশিক বাণিজ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ‘ফরেন ট্রেড ডিভিশন’ চালু করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সাড়ে ১০ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রতিটি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২০২টি দেশে প্রায় ৭৫০টি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৪৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে। এই সময়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে দেশের বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা জিডিপি’র ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ-এর সর্বশেষ জিডিপি’র র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ পিপিপি ভিত্তিতে বিশ্বের ৩০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সেইসাথে দক্ষিণ এশিয়ায় ২য় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, এবার দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। তাঁর সরকারের প্রত্যাশা ২০২৩-২৪ সালে এই প্রবৃদ্ধির হারকে ডবল ডিজিটে (১০ শতাংশ) নিয়ে যেত সমর্থ হবে।
তাঁর সরকারের দারিদ্র বিমোচানের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২১ শতাংশ হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার। আশা করছি, মাথাপিছু আয় অচিরেই ২ হাজার ডলার অতিক্রম করবে এবং ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ দারিদ্র ১৬-১৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।’
এই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪,৫ ও ৬ এর কোঠায় থাকায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার উচ্চ হলে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে তুণমূলের মানুষ এর সুবিধাটা পায়। যেটি এখন দেশের জনগণ পাচ্ছে।’ ‘ফলে, দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
দেশের শিল্পায়নে বিদ্যুৎকে অন্যতম চালিকা শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেশের ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।’
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর সরকার দেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘শিল্প স্থাপনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যার সমাধান করেছি এবং এলএনজি আমদানি শুরু করেছি।’
ফেøাটিং এলএনজি টার্মিনাল এবং ল্যান্ড বেজ টার্মিনালও করা হবে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৮-২০২১ সন মেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করেছে। প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যের ক্ষেত্রেও রপ্তানি ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। ফলে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকগণ রপ্তানি বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়াতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৈরি পোশাকখাতে এ বারের বাজেটে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানিতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টায় ডব্লিউটিও কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ঔষধের মেধাস্বত্ব মেয়াদ ১ জানুয়ারি ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানোয় ঔষধ রপ্তানিতে এটি বিরাট অবদান রাখবে।
ডব্লিউটিও’র আওতায় সেবাখাতে স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদত্ত ‘ওয়েইভার’র মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করায় রপ্তানি আরো বৃদ্ধির আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ ও প্রণোদনার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করতে গত অর্থবছরে ৩৫টি খাতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ অর্থবছরে আরও কিছু রপ্তানি পণ্যকে নগদ সহায়তার আওতায় আনা হচ্ছে।’ ‘বাণিজ্য বসতী লক্ষী’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদের হার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’র (ইডিএফ) আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে সহজে স্বল্প সুদে ঋণ পাবার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
সরকার বাণিজ্য সহায়ক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ‘অনলাইন লাইসেন্সিং মডিওল’ (ওএলএম) চালু করা হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ফিসহ সকল ফি কমানো হয়েছে।
বিগত নির্বাচনে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন জোটের একতাবদ্ধট হয়ে নৌকাকে সমর্থন প্রদানের ঘোষণাকে অভূতপূর্ব আখ্যায়িত করে এজন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য আমরা বিদ্যমান কোম্পানি আইনকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
এ সময় দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর এবং দক্ষ ও কর্মঠ যুব সমাজ গড়ে তোলায় সরকারের উদ্যোগ ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজ ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, তাদের জন্য ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা- ২০১৮ প্রণয়ন এবং ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণেরও উল্লেখ করেন তিনি।
দক্ষিণ আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশসমূহের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রাপ্তির জন্য তাঁর সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ও তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘নতুন পণ্য নতুন দেশ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধির আকাঙ্খা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৮০০/কেএমকে