বাজিস-৪ : ডোমারের ‘বাহে কৃষি ফার্ম’ ড্রাগন চাষে সফল

167

বাজিস-৪
নীলফামারী- ড্রাগন চাষ
ডোমারের ‘বাহে কৃষি ফার্ম’ ড্রাগন চাষে সফল
নীলফামারী, ২৯ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : লাল, হলুদ সাদা ড্রাগন ফল। এসব ফল ধরেছে জেলার ‘বাহে কৃষি ফার্মে’। ওই ফার্মটি সফল হয়েছে পরিবেশসম্মত উপায়ে ড্রাগন চাষে।
জেলার ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া গ্রামে সাড়ে ১০ বিঘা আয়তনের বাগানটির অবস্থান। চারদিকে সবুজের সমারোহ, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো খুঁটির সাথে ড্রাগন গাছ। সবুজ ওই গাছে শোভা পাচ্ছে হরেক রঙ্গের ড্রাগন ফুল ও ফল। একই বাগানের আছে, মাল্টা, সবেদা, প্যাসন ফ্রুড অ্যাবোকাডো, ক্যারোসলসহ নানা দেশি বিদেশি প্রজাতির ফল ও ওষূধী গাছ। ক্যারোসল ক্যান্সার প্রতিরোধী যা গ্রাভিওলা নামে পরিচিত। সব মিলে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
ওই বাগানে গিয়ে কথা হয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে পরীক্ষামুলক দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন, ওই ফার্মের মালিক রিয়াসত করিম। ১৫ মাসের মধ্যে এর সফলতা দেখে ২০১৮ সালে আরও নয় বিঘা জমিতে বাগান সম্প্রসারণ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ওই বাগানে দেশি বিদেশি নানা প্রজাতির ফল ও ওষুধী গাছ লাগিয়েছেন। যা দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন।’ ওই বাগানের অংশীদার হিসেবে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান এসময়।
ওই বাগান দেখতে আসা পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলি ইউনিয়নের বিরেন্দ্র নাথ রায় (৪৫) বলেন, ‘আমি লোকমুখে শুনে বাগানটি দেখতে এসেছি। বাস্তবতা দেখে খুবই ভালো লাগলো। ওষুধী গাছগুলো মানুষের উপকারে আসছে।’
তিনি বলেন,‘আগে জানতাম ড্রাগন বিদেশী ফল। চোখে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতে পারতাম না দেশের মাটিতে ওই ফলের আবাদ করা যায়।’ মুগ্ধ হয়ে ড্রাগন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
খাটুরিয়া গ্রামের মো. রাশেদুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘প্রথমের দিকে গাছ লাগানো দেখে এটিকে গুরুত্ব দেননি এলাকার মানুষ। কিন্তু এখন দেখছি তার সে বাগান থেকে আয় আসছে। ওষুধী গাছ থেকে মানুষের উপকার হচ্ছে। দূর দূরান্তের মানুষ এসে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোসল গাছের পাতা নিয়ে যাচ্ছেন। শুনেছি ওই গাছের ফল ধরতে আর এক বছর সময় লাগবে। সেটি ক্যান্সার প্রতিরোধে আরও উপকারী।’
ওই বাগাগে প্রতিদিন কাজ করছেন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। বাগানটির জন্য তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকায়। এর মধ্যে স্থায়ী ৫ জন শ্রমিক আট হাজার টাকার উপরে ও অস্থায়ীরা পাচ্ছেন প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মুজুরী।
তাদের মধ্যে আকালু মিয়া (২৫) বলেন,‘আগে এলাকায় কাজের অভাব ছিল। এজন্য কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে যেতে হতো। এখন বাড়িতে থেকে কাজের পর পরিবারকে সময় দিতে পারছি।’
বাগানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বের অংশিদার ইসমাইল হোসেন জানান, এখন ১ হাজার ৭৫৫টি পিলারে সাড়ে সাত হাজার ড্রাগন গাছ রয়েছে। এবছর প্রথম পর্যায়ে আমরা ১২শ কেজি ফল সংগ্রহ করেছি। যা স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা ও সিলেটে পাঠিয়েছি প্রতিকেজি ফল চার শত টাকা দরে। মে মাসে ড্রাগন গাছে ফুল আসে। এক মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথমবার ফল সংগ্রহ করার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার এবং এভাবে ছয় মাস চলতে থাকে পর্যায়ক্রমে।
পরিবেশের কথায় তিনি বলেন,‘সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এসব ফলের চাষ করছি। সার হিসেবে হাড়ের গুড়া, ভার্মি কম্পোজ, গোবর, খৈল ও বিভিন্ন গাছের লতাপাতা পচানো সার ব্যবহার করছি। কীটনাশক হিসেবে নিম পাতা ও মেহগিনি পাতার রস ব্যবহার করা হচ্ছে । পাশাপাশি ফলে ব্যাগিংও করা হচ্ছে।
‘বাহে কৃষি ফার্মের’ মালিক রিয়াসত করিম বলেন, আমি প্রায় ২২ বছর যাবত কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দেড় বিঘা জমিতে এর চাষ শুরু করি। যশোরের চৌগাছা থেকে এর চারা সংগ্রহ করে ২৫৬টি পিলারে এক হাজার ২৪টি ড্রাগন গাছের চারা রোপণ করি। রোপণের ১৫ মাসের মধ্যে ড্রাগন ফল পেতে শুরু করি। সে সময় স্থানীয় বাজারে কিছু ফল বিক্রি করি, এবং ঢাকা ও সিলেটে কিছু বিক্রি করি। ঢাকা ও সিলেটে এর চাহিদা বেশি।
তাঁর সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে বাগান করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। প্রথম বছর দেড় বিঘার ফল থেকে আয় আসে তিন লাখ টাকা।
এবছর ওই সাড়ে ১০ বিঘায় প্রথম পর্যায়ে এক হাজার দুইশ কেজি ড্রাগন ফল পান। একটি বাগান থেকে কম পক্ষে ১০ বছর ড্রাগন ফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রথম বছরের সফলতায় আমি আরও নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান সম্প্রসারিত করি। আনন্দলোক ট্রাষ্ট এতে অর্থায়ন করেছে বলেও জানান তিনি। ড্রাগনের পাশাপাশি ছয় বিঘা জমিতে লিচু বাগান ও চার বিঘা আম বাগান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ছয় মাস ফল দেয়। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দিনের পরিধি বৃদ্ধি করে সারা বছর এর ফলন পাওয়া সম্ভব।’
জেলা কৃষি সম্পসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ বলেন,‘ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। প্রতি বিঘায় প্রথম বারের ফল থেকেই দুই লাখ টাকার উর্দ্ধে আয় করা সম্ভব। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে আয় বাড়বে। জেলায় বাহে কৃষি ফার্ম, নীলসাগর এগ্রোসহ আটটি বাণিজ্যিক ড্রাগন বাগান আছে। এসব বাগানের সফলতায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। “বাহে কৃষি ফার্মের’ ক্যারোসল ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং প্যাসন ফ্রুড ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বলেও জানান তিনি।
বাসস/সংবাদদাতা/১৩১৫/নূসী