বাসস দেশ-১৬ : শহীদ মিনারে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন

140

বাসস দেশ-১৬
মোজাফফর-শহীদ মিনার-শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন
ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : বাংলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মরদেহে সর্বস্তরের জনগণ আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ।
বেলা পৌনে ১টার সময় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে শোকার্ত মানুষ প্রবীণ এই রাজনীতিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য’র প্রতি মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, তথ্য সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রয়াতের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার এমপিসহ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষে সাবেক এডিশনাল আইজিপি মনিরুল আলম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল,এডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের নেতৃত্বে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ বাম রাজনীতির পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গণসংহতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রি, উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাপ ভাসানী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, খেলাঘরের আসর, আমরা মুক্তিদ্ধোর সন্তানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ কাজ করে গেছেন। তিনি কখনো চাওয়া পাওয়ার রাজনীতি করতেন না। শুধুমাত্র জনগণের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর মুৃত্যুতে এক বিরাট শূণ্যতা সৃষ্টি হলো।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের অবদান ছিল। তিনি জাতীয় রাজনীতিতে অভিভাবকের মতো ছিলেন। সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে তিনি একজন আপোষহীন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম, তখন মুজিবনগর সরকারের ৬ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের আদায়ের জন্য তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। ভাষাআন্দোলনের সময়ও তার বিশেষ অবদান রয়েছে। অধ্যাপক আহমদ তার আদর্শ থেকে একটুও সরে যাননি।
বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ এর মহাপরিচালক মোনায়েম সরকার বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে পূর্নগঠনে শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে কাজ করেছেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর । সেময় ত্রিদলীয় ঐক্যজেটে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও সিপিবি’র নেতৃত্বে তিনি কাজ করেছেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য,অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কেয়াম উদ্দিন ভূইয়া স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আফজারুন্নেছা। মোজাফফর আহমদ হোসেনতলা স্কুল, জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশন,দেবীদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে পড়ালেখা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেসকোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃতী ছাত্র দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ সালে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি ও তাঁর স্ত্রী আমেনা আহমদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেবীদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাাব উত্থাপন করেন।১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। তিনি আত্মগোপনে থেকে আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন । ১৯৬৭ সালে মোজাফফর আহমদ পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন তিনি এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন মোজাফ্ফর আহমেদ। ওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ,সিপিসি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ১৯৭৯ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি ও প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে কারারুদ্ধ হন।
বাসস/এএসজি/এসএস/১৮০০/জেহক