বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : অনাথ, সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের পাশে ‘শিশু পরিবার’

250

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশু-পরিবার
অনাথ, সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের পাশে ‘শিশু পরিবার’
॥ মাহবুব আলম ॥
ঢাকা, ২২ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের বিকাশ ছাড়া জাতির ভবিষ্যত সমৃদ্ধি অসম্ভব। তাই সমাজের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর অংশ, অনাথ, দুঃস্থ, নিরাশ্রয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও সুবিধাবঞ্চিত, ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা, কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশুদের কল্যাণে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা এসব শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণে, তাদেরকে ভবিষ্যতে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়তে দেশের বিভিন্ন শিশু পরিবার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর হাজারো শিশু পড়াশোনা শেষ করে সমাজের মূল¯্রােতে এবং দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করছে। তেমনই একজন হচ্ছেন রওশন আরা, তিনি বেড়ে ওঠেছেন খুলনার সরকারি শিশু পরিবারে। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে পড়ছেন। তার এ পর্যায়ে আসার পেছনে যত অবদান সবটুকুই দিচ্ছেন সরকারি শিশু পরিবার, খুলনাকে।
রওশনের ভাষ্য, আমি যখন শিশু পরিবারে আসি তখন পাঁচবছরের ছোট্ট শিশু। এখানে আসার আগের কিছু তেমন মনে নেই। বাবা মারা যান আমার বয়স যখন তিনবছর তখন। রওশনের গল্পের শুরুটা শিশু পরিবারের একজন হওয়ার মাধ্যমেই। ২০০১ সালে খুলনার সরকারি শিশু পরিবারে তাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। ভালো ফল করেছেন এসএসসিতেও। রওশন বলেন, শিশু পরিবারের সকলের ভালোবাসা আর যতœই ছিলো আমার চালিকা শক্তি। এর মধ্যে আমি আবৃত্তি, গান অভিনয়, ছবি আঁকাসহ আরও অনেক কিছুই করে থাকি। এখানকার শিক্ষকেরা আমাদেরকে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখেন। শিশু পরিবারে থাকাকালেই দর্জি বিজ্ঞান, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বিউটিফিকেশনের কাজ শিখেন রওশন। বিভাগীয় স্পোর্টসেও তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রওশন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের এখানে কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসতেন। তাদের দেখে ভাবতাম আমি যদি এমন হতে পারতাম। ভবিষ্যতে তিনি একজন বিসিএস কর্মকর্তা হতে চান।
বাগেরহাট শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠেছেন খুলনার মেয়ে তানজিনা আক্তার। বর্তমানে তিনি খুলনার দাকোপ উপজেলায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমি আমার মা-বাবাকে কখনও দেখিনি। হোমেই বড় হয়েছি। এই হোম না থাকলে আমি হয়তো আজ এখানে নাও থাকতে পারতাম।
সূত্র জানায়, পিতৃ-মাতৃহীন অসহায় শিশুদের পিতা-মাতার স্নেহে ও সরকারি খরচে লালন-পালন করা হয়। এসব শিশুদের সরকারি খরচে ইন্টারমিডিয়েট ও চার বছরের ডিপ্লোমা করানো হয়। তবে মেধাবী হলে তাদের মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্বাবলম্বী হতে যা যা করণীয় সবই বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয় তাদের।
খুলনা শিশু পরিবারের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ক উপ-তত্ত্বাবধায়ক আবিদা আফরিন বলেন, শিশু রওশন আরা একজন সংগ্রামী তরুণী। তিনি এখানে আসার পর থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। তার ইচ্ছা বিসিএস দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেয়া। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর তার পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে ও করবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত তিনবছরে মন্ত্রণালয়ে শিশু সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের নতুন কর্মসূচি ও প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রসারণ করা হয়েছে বিদ্যমান কার্যক্রমসমূহও। এরই অংশ হিসেবে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার রয়েছে। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ৩৭টি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। আর অটিস্টিক শিশুদের জন্য ‘প্রয়াস’ নামে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে তিনটি নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে থাকা ৫ হাজার ৫৮০ শিশুকেও মাসিক ২ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন বলেন, সমাজের অবহেলিত শিশুদের সুন্দর জীবন উপহার দিতে সরকারের এ উদ্যোগ কাজে লেগেছে। আজ রওশন আরা খাতুন তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/মাআ/কেজিএ/০৯৪৫/আহো/-এসএইচ