বাজিস-২ : মাগুরায় ৩৬টি ইউনিয়নে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ চলছে

134

বাজিস-২
মাগুরা-উন্নয়ন কাজ
মাগুরায় ৩৬টি ইউনিয়নে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ চলছে
॥ দেলোয়ার হোসেন ॥
মাগুরা, ২১ আগস্ট, ২০১৯(বাসস) : লোকাল গভার্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩(এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের আওতায় মাগুরা জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের তৃণমূল এলাকায় বিভিন্ন ধরণের উন্নয়নমুলক কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে মোট ১৪ কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ হাজার ৬৬৯টি স্কিম গ্রহণ ও বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ তাদের চাহিদাভিত্তিক সেবা পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
মাগুরা সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের বুজরুক শ্রীকুন্ডী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পল্লব কুমার দে, প্রভাষক সঞ্জীবন বিশ্বাস, আবু সেলিমসহ অনেকে জানান, কলেজে প্রবেশের রাস্তাটি কাঁচা থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অসুবিধা হত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমানের সার্বিক তদারকিতে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় মহাবিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে ইটের সলিংয়ের রাস্তাটি ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭৩ মিটারের নির্মিত হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে।
সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের সুবিধার্থে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য অভারহেট ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে। বাজরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইয়ারউদ্দিন, তপন সাহা, আব্দুর রাজ্জাক, আলতাফ হোসেনসহ অনেকে জানান, পানি সরবরাহের জন্য ট্যাংকি স্থাপিত হওয়ায় বাজারের ব্যবসায়ীরাসহ এলাকাবাসী বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে।
জেলা স্থানীয় সরকার সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ‘পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ’ পরিচালিত ‘এলজিএসপি-২ প্রকল্পের’ উন্নয়ন কাজ সফল সমাপ্তির পর এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। যা স্থানীয় জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণসহ তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৩ হাজার ৩২৩ টাকা অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। যা দিয়ে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কাজের পাশপাশি প্রথম বারের মত বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার রাস্তার মোড়ে পরিবেশ বান্ধব সোলার প্যানেল চালিত স্ট্রিট লাইট স্থপান করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরেও এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হবে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ এ দু’অর্থ বছরে মোট ১৪ কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ হাজার ৬৬৯ টি স্কিম গ্রহণ ও বাস্তবায়িত হয়েছে।
এর মধ্যে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৮ হাজার ২২৪ টাকা ব্যয়ে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩৮ কিলোমিটার ফ্লাট সলিং রাস্তা নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য ১৮২টি অগভীর নলক’প স্থাপন, শিক্ষার উন্নয়নে ১০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেয়ার, বেঞ্চ, ফ্যান, আলমারী, খেলার সামগ্রী বিতরণ, শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, সাংস্কার ও প্রাচীর নির্মাণ, কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩টি যাত্রী ছাউনি, ২২টি ইউড্রেন, ৬টি ছায়াবীথী, ৫৫টি স্প্রে মেশিন সরবরাহ ও বাজার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের উন্নয়নে ৩৮৬টি স্যানিটারী ল্যাট্রিন বিতরণ, ৩টি বাজার ও স্কুলে বাথরুম স্থাপন এবং স্যানিটারী কিডস বিতরণ, মানবসম্পদ উন্নয়নে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ও বিতরণ এবং বিলবোর্ড স্থাপন, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বৃক্ষ রোপণ, ইকোপার্ক নির্মাণ, যাত্রী ছাউনী নির্মাণ এবং ১৯টি তথ্য প্রযুক্তি ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার, ক্যামেরাসহ আসবাবপত্র সরবরাহ করার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে।
অপর দিকে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৭ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩৭ কিলোমিটার ফ্লাট সলিং রাস্তা নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য ৯৬টি অগভীর নলক’প সরবরাহ এবং শত্রুজিৎপুর বাজারে অভারহেড ট্যাংকি স্থাপন করে পানি সাপ্লাইয়ের ব্যাবস্থা, শিক্ষার উন্নয়নে ১১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল, ফ্যান, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং টয়লেট নির্মাণ, কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫টি যাত্রী ছাউনি, ২১টি ইউড্রেন, ১০টি ছায়াবীথী, ৩টি ঘাটলা এবং ৪০টি স্প্রে মেশিন সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের উন্নয়নে ২টি কমিউিনিটি ক্লিনিকের সংস্কার, ২টিতে আসবাবপত্র সরবরাহ এবং দ্বারিয়াপুর হাসপতালে এ্যপ্রোন সরবরাহ, মানবসম্পদ উন্নয়নে ৭৪টি সেলাই মেশিন, ২টি হুইল চেয়ার সরবরাহ এবং আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুরে ইকোপার্কের উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ১৩টি ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার, ক্যামেরা, প্রজেক্টর, ইন্টারনেট মডেম, চেয়ার, টেবিল সরবরাহ এবং ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রচারণার জন্য তথ্য বোর্ড ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদের পল্লী এলাকায় জনণের প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের মধ্যেমে অত্যন্ত সচ্ছতার সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ফলে স্থানীয় জনগণের অংশিদারীত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো ঃ আলী আকবর জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালীকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় প্রশাসন এ কাজের মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা, নিরাপদ পানি সরবরাহ, কৃষির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

বাসস/সংবাদদাতা/১২০৬/নূসী