বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ : দন্ডিতদের সাজা কার্যকরের মধ্যদিয়ে দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে : প্রধানমন্ত্রী

124

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১
শেখ হাসিনা- বাণী
দন্ডিতদের সাজা কার্যকরের মধ্যদিয়ে দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ২০ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় দন্ডিতদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি ২১ শে আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ, উদার, গণতান্ত্রিক উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের সকল নাগরিক ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট উপলক্ষে আজ এক বাণীতে এ প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ শে আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এ দিনে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।”
তিনি বলেন, চারিদিকে যখন গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে, তখন দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে তাঁকে রক্ষা করেন। আল্লাহ’র অশেষ রহমত ও জনগণের দো’য়ায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
‘তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী’।
শেখ হাসিনা বলেন, এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্দ করে দেয়া। বাংলাদেশকে নেতৃত ¡শূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নারকীয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। অনেক আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নৃশংস হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর মত ঘৃণ্য কাজ করে। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকেনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক কুশীলব এ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর পর দুই মামলার সকল আইনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে গত বছরেরর ১০ই অক্টোবর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ২১-এ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করেন।
গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারদন্ড দেয়া হয়েছে অপর ১১ আসামিকে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অপরাধ করার ধৃষ্টতা দেখাতে না পারে তা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, সকল আইনী বিধি-বিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব এই রায় কার্যকর করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যখনই সরকারে এসেছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা করেছে। বিএনপি-জামাতের সকল অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯-এ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে।
তিনি বলেন, “আমরা ৫ বছরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। দেশের মানুষকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাক্সিক্ষত ধারা উপহার দিয়েছি বলেই জনগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আমাদের একটি নিরঙ্কুশ বিজয় উপহার দিয়েছে। আমরা জনগণকে দেয়া প্রতিটি ওয়াদার পূর্ণ বাস্তবায়ন করব।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ‘আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ২য় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।’
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের মানবতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার সকল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিহত করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের কোন স্থান হবে না। এসব নির্মূল করবই। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী একুশে আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাসস/তবি/কেসি/১৭২০/অমি