২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শিকার নাসিমা ফেরদৌসী শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন স্প্লিন্টার

203

বরগুনা, ২১ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস): ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বরগুনার সাবেক সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসীর শরীরে এখনও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার যন্ত্রনা দেয়।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি এ যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন। দশম জাতীয় সংসদের এমপি নাসিমা ফেরদৌসীর প্রত্যয়- নারীরা যাতে এভাবে আর নির্যাতিত না হয়, সেজন্য তিনি সব সময় নারীদের পাশে থাকবেন।
২১ আগস্টের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, সারাদেশে জঙ্গি হামলা ও গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সেই সময়ের মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আইভী রহমানের পাশেই ছিলেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। সেখানে ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই নারকীয় হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন তিনিসহ কমপক্ষে ৫০০ জন। গ্রেনেড
বিস্ফোরণের সময় মনে হচ্ছিল, যেন চারদিকে আগুনের ফুলকি। এরই মধ্যে তিনি টের পেয়ে যান, শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। এক পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখেন, সবারই একই অবস্থা। এরপর জ্ঞান হারান।
মৃত ভেবে তাকে তোলা হয়েছিল লাশের ট্রাকে। কিন্তু নড়েচড়ে ওঠায় পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, “দুই পা অচল হওয়ায় চার বছর শয্যাশায়ী ছিলাম। চার মাস সারা শরীরে স্পঞ্জ লাগানো ছিল। এরপর হুইল চেয়ার, স্ট্রেচার এবং ওয়াকারের মাধ্যমে হাঁটা শেখানো হয়। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। এতো যন্ত্রণা, এতো কষ্ট, হাঁটতে কষ্ট, শুতে কষ্ট, এতো অশান্তির মধ্যেও সান্তনা খুঁজে পাই, মারা গেলে পৃথিবীর আলো-বাতাস আর দেখতে পেতাম না। মাঝে মধ্যে আহত অবস্থার ছবি দেখে অবাক হই ও
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামে নাসিমার জন্ম। সেখানেই কাটে শৈশব আর কৈশোর। ১৯৭৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দলীয় কাজ শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তিনি রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হন। এরপর জায়গা করে নেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। রাজপথে লড়াকু সৈনিক হিসেবে আন্দোলন করে মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন তিনি।