জয়পুরহাট, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : মাছ ধরার বিশেষ যন্ত্র ঢেউল বা চাঁই তৈরি (স্থানীয় নাম খলসানি) করে শত বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন জয়পুরহাট সদরের বেড়ইল গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩শ পরিবার। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
বছরের ৬ মাস তাদের ব্যবসা ভাল চললেও বাকি ছয় মাস অভাব-অনটনে কাটে তাদের সময়। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে জীবিকার তাগিদে আজও আঁকড়ে ধরে আছেন ওই গ্রামের খেটে খাওয়া পরিবারগুলো।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বাঁশের তৈরি খলসানির চাহিদা তুলনামূলক বেড়ে যায়। সে কারণে জেলার বেরইল গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিশেষ এই যন্ত্র বানানোর কাজে।
স্থানীয়ভাবে এর নাম খলসানি হলেও কোথাও কোথাও চাঁই বা ঢেউল নামেও পরিচিত এই যন্ত্রটি। বর্ষা শুরুর পর থেকে মাঠ-ঘাটে পানি থাকা বিশেষ করে জৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত খলসানি বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আনন্দে দিন কাটে তাদের। তবে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় খলসানির দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।
এক সময় জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘি ও ধানক্ষেত পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বাঁশের তৈরি মাছ ধরার এই বিশেষ ধরনের যন্ত্র খলসানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন আর সে অবস্থায় নেই। সে স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারেন্ট জাল। ফলে হাট-বাজারে খলসানির আমদানির তুলনায় বেঁচা-বিক্রি কম বলে জানালেন খলসানি বিক্রেতা মোকলেছার রহমান। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখানকার তৈরি খলসানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিন পরিবারের সকলেই মিলে ৪/৫টি খলসানি তৈরি করা সম্ভব হয়ে থাকে। বাজারে এখন প্রতি পিচ খলসানি বিক্রি হচ্ছে ছোট গুলো ১৫০ টাকা আর বড় গুলো প্রকার ভেদে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। জেলা শহরের নতুনহাটে শনিবার ও বুধবার দুপুরের পরে এই খলসানির হাট বসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা এখান থেকে খলসানি কিনে নিয়ে যায়।
রুচির পরিবর্তন আর যান্ত্রিকতার দাপটের পরেও এই হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য শত বছরের পুরনো বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেরইল গ্রামের এই দরিদ্র পরিবারগুলো।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা বা ঋণের সুবিধা পেলে তাদের এ পৈত্রিক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারন করা সম্ভব হতো বলে জানান, বেরইল গ্রামের খলসানি তৈরির কারিগর অরুন চন্দ্র।