বাজিস-২ : বরিশালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনগ্রসর ও বঞ্চিত মানুষের বেদনা ঘুচে যাচ্ছে

247

বাজিস-২
বরিশাল- সামাজিক-নিরাপত্তা
বরিশালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনগ্রসর ও বঞ্চিত মানুষের বেদনা ঘুচে যাচ্ছে
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৮ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে জেলায় অবহেলিত, অনগ্রসর, নিগৃহিত ও বঞ্চিত অসহায় সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বেদনা ঘুচে যাচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বাসস’কে জানায়, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রায় শতভাগ সাধারণ মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে গড়ে তুলছে। মাস শেষে সরকারের দেয়া ভাতায় তাদের পরিবারে ও সমাজে মর্যাদা বেড়েছে। সমাজের নিষ্ঠুরতার শিকার বিধবা নারীরা এখন ঠাঁই পাচ্ছেন বাবা-ভাই কিংবা আত্মীয়ের পরিবারে, আর প্রতিবন্ধীদের কোন পরিচয়ই ছিল না। কোন সংসারে একটি প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হলে সমাজের চোখের আড়ালে রাখার জন্য চলতো প্রাণপণ চেষ্টা। সমাজে দারিদ্র্য ও অশিক্ষার কারণেই মানুষ তাদের কাছের মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দিত। সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত জনগোষ্ঠির জীবন-মান উন্নয়ন করে তাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে বর্তমান সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অন্যতম। এ খাতে ১৮ টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে নগদ টাকা ভাতা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। এসব ভাতার মধ্যে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা ও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, বেদে, হরিজন ও অনগ্রসর ভাতা অন্যতম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বিভাগে এ কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা ভোগ করছে প্রায় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭’শ নারী-পুরুষ। যার ফলে, পারিবারিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫’শ ৩৮ জন নারী ও পুরুষকে। টাকায় যার পরিমাণ ৭৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার।
এদের মধ্যে বরিশাল জেলায় ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪’শ ২৮ জন, পটুয়াখালীতে ৫১ হাজার ২’শ ৩৬ জন, ভোলা জেলায় ৫৭ হাজার ৪’শ ৩ জন, পিরোজপুরে ৩৮ হাজার ২’শ ৩৪ জন, বরগুনায় ৩০ হাজার ২’শ ৭২ জন ও ঝালকাঠি জেলায় রয়েছেন ২৩ হাজার ৯’শ ৬৫ জন।
বিভাগে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা পাচ্ছেন ১ লক্ষ ২১ হাজার ৫’শ ৯৯ জন। যার টাকার পরিমাণ ৩৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ১০ হাজার। যারমধ্যে বরিশাল জেলায় ভাতা পান ২৯ হাজার ৩’শ ৬৩ জন, পটুয়াখালীতে ২৪ হাজার ৭’শ ৫২ জন, ভোলায় ২৩ হাজার ৭’শ ৫২ জন, পিরোজপুরে ১৮ হাজার ৫’শ ৪৭ জন, বরগুনায় ১৪ হাজার ৬’শ ৭৮ ও ঝালকাঠি জেলায় ১০ হাজার ৫’শ ৭ জন।
অপরদিকে, বিভাগে প্রায় ৬৫ হাজার ৫’শ ৬৩ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীকে ২৪ কোটি ১৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৬’শ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ১৭ হাজার ৯’শ ৭২ জন, পটুয়াখালীতে ১২ হাজার ২’শ ২৬ জন, ভোলায় ১৩ হাজার ২৬ জন, পিরোজপুরে ৮ হাজার ৭’শ ৭ জন, বরগুনায় ৮ হাজার ১১ জন ও ঝালকাঠি জেলায় ৫ হাজার ৬’শ ২১ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী রয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এসব ভাতাভোগীকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
নগরীর বিধবা ভাতা প্রাপ্ত সাহানারা বেগম বলেন, বিভিন্ন অফিস-আদালতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে যা রোজগার করি তাতে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন। সরকারের দেয়া এ বাড়তি বিধবা ভাতা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বিহারীপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. হোসেন আলী হাওলাদারের ছেলে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মো. নজরুল ইসলাম ভাতা পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে। মো. নজরুল বিগত ৮ বছর যাবত ভাতা পাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.জাবির আহমেদ বলেন, সমাজ সেবা অধিদফতরে জরিপের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি করে সব ধরণের প্রতিবন্ধী নাগরিককে পরিচয়পত্র দেবে। যারা অভিহিত হবেন ‘সুবর্ণ নাগরিক’ হিসেবে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাব্বির ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের এসব কর্মসূচি একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। বয়স্ক, বিধবা ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা প্রত্যেক উপকাভোগীর জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি করছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৩০/নূসী