রাজধানীতে কোরবানীর পশুর বাজার ধীরে ধীরে জমে উঠছে

610

ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাজধানীর কোরবানীর পশু হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকেই কোরবানীর পশু কিনতে বাজারে ভিড় জমান ক্রেতারা। জুম্মার নামাজের পর ক্রেতারা বাজারে ভিড় করেন।
রাজধানীর গাবতলী, উত্তর শাহজাহানপুর, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায় স্থাপিত হাটসহ কয়েকটি হাট ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার হাটগুলোতে দেশি গরুর যোগান সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত দেশীয় গরু-ছাগল রয়েছে।
হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। কোরবানির জন্য মানুষ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার গরুই পছন্দ করছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে এবার মোট ২৪টি স্থানে পশুর হাট বসেছে। বুধবার থেকে এসব হাটে কোরবানির পশু বেচা-কেনার অনুমোদন দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। অবিরামভাবে বেচা-বিক্রি চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। হাটে ঢোকার পথে ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা গরু ছাগল ও মহিষের শারীরিক পরীক্ষা করছেন।
রাজধানীর গাবতলী পশু হাটে গিয়ে দেখা যায়, এখানে গরু, মহিষ, খাসি, উট ও দুম্বা পাওয়া যাচ্ছে। গাবতলী হাটে গরুর দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাটে ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের খাসির সংখ্যা বেশি। তবে ৩০-৩৫ এবং ৪০ হাজার টাকাও কিছু খাসির দাম চাওয়া হচ্ছে।
তাছাড়া গাবতলী হাটে তিনটি উট এসেছে। এ তিনটি উঠের দাম হাঁকানো হয়েছে যথাক্রমে ১৪ লাখ, ১৬ লাখ এবং ১৭ লাখ। উটের মালিক মো. আজাদ রহমান বলেন, ‘এ উটগুলো ভারত থেকে আনা হয়েছে। অনেকেই দাম করছেন। দামে বনাবনি না হওয়ায় উটগুলো বিক্রি করা হয়নি।’ অন্যদিকে গাবতলী গবাদি পশুর হাটে কয়েকটি দুম্বাও উঠেছে।
মিরপুর-১ এর বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মনোয়ার হোসেন গাবতলী হাট থেকে ৬৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বাসস’কে জানান, হাট ঘুরে তার মনে হয়েছে গতবারের তুলনায় গরুর দাম একটু বেশি।
এই হাটে জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা আসাদ হোসেন নামের এক গরু ব্যবসায়ি বুধবার দুই ট্রাকে করে ৩২টি গরু এনেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। হাটে দেশীয়ভাবে পালন করা গরু-ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হাটে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। গতবারের চেয়ে দাম বেশি কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এবার গতবারের মতো দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আজ সকালে উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন হাটে মেহেরপুর থেকে আসা একজন ছাগল ব্যবসায়ি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
তিনি জানান, বুধবার রাতে ৫০টি ছাগল নিয়ে তিনি এই হাটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত ১০টি বিক্রি করতে পেরেছেন। সকাল থেকেই প্রচুর ক্রেতা এখানে আসছে।
এদিকে কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা স্থাপিত হাটের একজন ক্রেতা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মূল রাস্তায় এবার গরু-ছাগলের হাট বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। এতে নগরবাসীর চলাচলে আগের মতো সমস্যা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশি দাম পাওয়ার আশায় ব্যবসায়ী ও খামারিরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীতে গরু নিয়ে আসেন। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, যশোর, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-ছাগল বাজারে এসেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ইদুল আযহা উপলক্ষে সারাদেশে এ বছর ২ হাজার ৩৬২টি কোরবানি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে বসেছে ২৪টি। যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার রাজধানীর চারপাশে হাট বরাদ্দ দিয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুরহাট বসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এই হাটগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি হাট রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানীর হাটগুলোতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রত্যেক হাটে পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মানি এস্কর্ট ও জাল নোট শনাক্তকরণেও বসানো হয়েছে বুথ।
এছাড়া যারা হাট ইজারা নিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে গরু-ছাগলের মল-মূত্র ও ময়লা নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।
এবার উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী আগেভাগেই গাবতলী হাটে গরু নিয়ে এসেছেন।