২০৪১ সাল নাগাদ চাহিদার আলোকে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

190

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত গ্যাসের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজ প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার ব্যবহারের পাশাপাশি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি, যা জ্বালানি নিরাপত্তায় এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আজ বৃহষ্পতিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে বর্তমান সরকার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নতুন নতুন জ্বালানির উৎস উদ্ভাবন, জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের জানুয়ারিতে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। আমাদের সরকারের সময়ে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানিকৃত এলএনজিসহ বর্তমানে নূন্যতম গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ৩ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, গৃহস্থালি, সিএনজি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বর্ধিত হারে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ ও ভোলা নর্থ নামে মোট ৪টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হওয়ায় বর্তমানে গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৭ এ উন্নীত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাপেক্স এর কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গভীর কূপ খননের ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রিগ ক্রয় ও ১টি রিগ পুনর্বাসন করাসহ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ সমুন্নত রাখতে ৩টি গ্যাস কম্প্রেসার স্টেশন (মুচাই, আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গা) স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস নেটওয়ার্ক রাজশাহীতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের বিশাল সমুদ্র এলাকায় গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান এবং উৎপাদন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব¬ু-ইকোনমি সেল’ গঠন এবং স্বাক্ষরিত পিএসসির আওতায় বর্তমানে অগভীর সমুদ্রের ৩টি ব¬কে এবং গভীর সমুদ্রের ১টি ব¬কে ৫টি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি একক ও যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সমুদ্রাঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে অধিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ২উ নন-এক্সক্লুসিভ মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে’ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে যে সকল দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তন্মধ্যে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ ছিল অন্যতম।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ তেল কোম্পানি শেল অয়েল এর নিকট থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। সেই থেকে তুলনামূলক সাশ্রয়ী জ্বালানির উৎপাদক হিসেবে এ গ্যাসক্ষেত্রগুলো অদ্যাবধি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব উদ্যোগ বর্তমান সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে। আসুন আমরা সবাই এসব উদ্যোগকে সমর্থন, শক্তিশালী ও বাস্তবায়ন করি।’ বাণীতে তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৯ আগস্ট ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০১৯’ পালন করা হচ্ছে জেনে আনন্দ প্রকাশ এবং দিবস টি উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।