এ্যাশেজের প্রথম টেস্ট থেকে তিনটি শিক্ষনীয় বিষয়

170

বার্মিংহাম (যুক্তরাজ্য), ৬ আগস্ট ২০১৯ (বাসস/এএফপি) : চলমান এ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে ২৫১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সোমবার এজবাস্টনে শেষ হওযা পাঁচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে শিক্ষনীয় তিনটি বিষয়
সব সময়ের মতই ফর্মে আছেন স্মিথ : দীর্ঘ ১২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আগের মত রং ছড়াতে পারবেন না বলে যে ধারনা করা হয়েছিল সেটি একেবারেই মিথ্যা প্রমাণ করেছেন স্টিভ স্মিথ। বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির দায়ে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা এ অসি ব্যাটসম্যান ম্যাচে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৪৪ ও ১৪২ রান করে প্রমাণ করলেন তার ফর্মে জং ধরেনি।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তার সেঞ্চুরিটি ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। আর দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরি সফরকারীদের পৌঁছে দিয়েছে চালকের আসনে। এ্যাশেজের এক টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাকিয়ে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরের স্থানে পৌঁছেছেন স্মিথ।
টেস্ট ক্রিকেটে কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৬। দ্বিতীয় সেরা স্মিথের ব্যাটিং গড় ৬২.৯৬। ১৯৩২/৩৩ সালের এ্যাশেজে ব্র্যাডম্যানকে কাবু করার জন্য ইংলিশ অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন ফের ফিরিয়ে এনেছিলেন কুখ্যাত ‘বডিলাইন’ কৌশল।
তবে ইংল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক জো রুটের অবশ্য সে রকম কোন কৌশল রপ্ত করেননি । যে কারণে স্মিথকে ফিরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এর আগে ২০১৭/১৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জিতেছিল ৪-০ ব্যবধানে। সেবার ১৩৭.৪ ব্যাটিং গড়ে সর্বোচ্চ ৬৮৭ রান করেছিলেন স্মিথ। এবার এজবাস্টনে স্বাগতিক দর্শকদের দুয়োধ্বনিকে উপেক্ষা করে তিনি যে ভাবে শুরু করেছেন তা ইংল্যান্ডের জন্য হতে পারে অশনি সংকেত।
স্পিনকে করতে হবে জয় : শুষ্ক ও ক্রমান্বয়ে মন্থর হয়ে যাওয়া পিচ স্পিনারদের জন্য দারুন সহায়ক। কিন্তু অসি তারকা নাথান লিওঁ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রানে ছয়টিসহ ম্যাচে যেখানে ৯ উইকেট শিকার করেছেন, সেখানে কোন আঁচড়ও কাটতে পারেননি ইংলিশ অফ-স্পিনার মঈন আলী। দ্বিতীয় ইনিংসে লিওঁ একাই ধ্বস নামিয়ে দিয়েছেন ১৪৬ রানে অল আউট হওয়া ইংলিশ ব্যাটিংয়ের।
অবশ্য ইংল্যান্ড দলকে কিছুটা সমস্যায় ফেলেছে পেসার জেমস এন্ডারসনের ইনজুরি। মাত্র চার ওভার বল করার পরই কাফ ইনজুরির কবলে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ এ উইকেট শিকারীর আগে থেকেই হাঁটুতে সমস্যা ছিল। ৩৭ বছর বয়সি এই তারকাকে নিয়ে আর কোন রকম ঝুঁকি নিতে পারবে না ইংল্যান্ড।
লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য হয়তো বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচকে অন্তুর্ভক্ত করতে পারে স্বাগতিক দল। কারণ ব্যাটিং বিশেষত্বর জন্য মঈনকে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও সর্বশেষ টেস্টের ৯ ইনিংসে মাঠে নেমে চরাবার শুন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে।
এদিকে টেস্টে অভিষিক্ত হবার জন্য ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জোফরা আর্চারকে কাটিয়ে উঠতে হবে সাইড ইনজুরি।
ব্যাটিংয়ে বৈপরীত্য : সিরিজ শুরু হবার আগে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ধারণা করেছিলেন এই এ্যাশেজে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিং সামর্থ্যই জয় পরাজয় নির্ধারনে ভুমিকা রাখবে। প্রথম ইনিংসে ঠিকই ব্যাটিং বিপর্যায়ে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ৩৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড ৩৫ রান সংগ্রহের মাধ্যমে দলকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ৫১ রানের সঙ্গে ম্যাথু ওয়েডের সেঞ্চুরিটি সত্যিই সফরকারীদের জন্য প্রেরণাদায়ক।
এদিকে টপ অর্ডার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংগ্রাম করছে ইংল্যান্ড। কিন্তু এই টেস্টে দেখা গেল ওপেনার ররি বার্নস ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন। তবে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের কৌশল নিয়ে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সব চেয়ে বড় আশংকার বিষয় হচ্ছে এজবাস্টনে ব্যর্থ হয়েছেন স্বাগতিক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান জো ডেনলি, জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। ব্যক্তিগতভাবে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও লর্ডসে কতটুকু করতে পারবেন সেটি নিয়ে আশংকা থেকেই যাচ্ছে।
উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টোর ব্যাটিং ফর্ম কতটা খারাপ যাচ্ছে তার প্রমান মিলবে সর্বশেষ ১৭টি টেস্ট ইনিংসের রান দেখলে। এ সময় তিনি শুধু মাত্র দুইবার ৩০ রান অতিক্রম করতে পেরেছেন। তার পরিবর্তে উইকেট রক্ষণে অনেক ভাল করতে পারেন বেন ফোকস। ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব বেশী ভাল না হলেও এই পর্যায়ে ইয়র্কশায়ার ক্রিকেটারের ব্যাটিং গড় ৪০।