বাজিস-৩
মেহেরপুর- ব্লাক বেঙ্গল
মেহেরপুরে কোরবাণীর জন্য ৫৯ হাজার ব্লাক বেঙ্গল প্রস্তুত
দিলরুবা খাতুন
মেহেরপুর, ৬ আগষ্ট, ২০১৯ (বাসস)
ছাগলের হাটে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কিনতে প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে মেহেরপুরের সদর উপজেলার বারাদি ছাগলের হাটে। স্বাদে-গুণে ভালো হওয়ায় এ ছাগলের কদর বাড়ছে দিন দিন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা মেহেরপুরের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতি হাট থেকে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, দাম নাগালের মধ্যে থাকায় এবার এ ছাগলের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি তারাও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
াদেশে মেহেরপুর জেলা ব্লাকবেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে প্রথম স্থানে। জাতিসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তির মূল্যায়নে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশে^র অন্যতম সেরা জাত বিবেচিত হয়েছে। বিশে^ যে পাঁচটি দেশে দ্রুত হারে ছাগল উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের চার জেলায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন বেশী হয়ে থাকে। ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগলগুলো স্বতন্ত্র জাতের। ঘরে ঘরে পালন হয় বিধায় এসব ছাগল এখনও সংকরায়ন হয়নি। এ জাতটি যেটুকু টিকি আছে তা গ্রামগঞ্জের মানুষের কল্যাণেই।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায় – বাংলাদেশের স্থানীয় জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মানের দিক থেকে বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ২০১৫ সালের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। দেশে কোরবাণীর ঈদে বিক্রি হওয়া ছাগলের ৯০ শতাংশই এ বিশ্বসেরা জাতের। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ছাগল অবশ্য কুষ্টিয়া গ্রেড হিসেবে পরিচিত। মূলত কুষ্টিয়া ও তার আশপাশের জেলায় এ ছাগলের লালন-পালন বেশি হয় বলে এ নামকরণ করা হয়েছে। মেহেরপুরের প্রায় প্রতিটি পরিবার ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে। শহর ও গ্রামগঞ্জের অসহায় ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ একদিকে মিটাচ্ছে দেশের পুষ্টির চাহিদা আর অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে গতিশীল করছে। মেহেরপুরে এক লাখ ৬ হাজার পরিবারে এক লাখ ৭৮৫৮৮টি ছাগল পালন হচ্ছে। এরমধ্যে এবার কোরবাণীর জন্য ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগল আছে ৫৯ হাজার। ছাগলের চাহিদা থাকায় মেহেরপুর জেলার পশু হাট থেকে ট্রাক ভর্তি করে ছাগল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্ব জেলাগুলোতে নেয়া হয়।
সরেজমিন মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল জায়গাজুড়ে কালো ও ধুসর রঙের শুধুই ছাগল আর ছাগল। মাথায় শিংহীন মাঝারি আকারের ছাগলের সংখ্যায় বেশি। অত্যন্ত শান্ত-স্বভাবের এবং পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে ছাগলগুলোর ডাকচিৎকারও কম। এ কারণে ৫০ ছাগলের দড়ির বাঁধন নিয়ন্ত্রণ করছেন একজনই। মেহেরপুরের ব্লাক বেঙ্গল জাতের কালো জাতের ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ ছাগলের চামড়া ও হাড় হয় খুবই উন্নতমানের। চামড়া দিয়ে ব্যবহার্য দামি পণ্য তৈরি হয়। তাই চামড়াও বিক্রি হয় চড়া দামে। খাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাস, ধান গমের গুঁড়ো, কাঁঁঠালপাতা। উঁচু ও শুষ্ক অঞ্চল হওয়ায় এবং খাদ্যের সহজলভ্যতার কারণে এ জেলায় ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উৎপাদন বেশি হয়। এ জেলার সবচেয়ে বড় বারাদি ছাগল হাট। ছোটবড় মিলিয়ে ২৭টি ছাগলের হাট রয়েছে এ জেলায়। কোরবাণী নিম্নে ৬ থেকে ২০ হাজার আবার ঊর্ধ্বে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দামেরও ছাগল পাওয়া যায় এ সমস্ত হাটে। সরেজমিনে মেহেরপুরের বারাদিতে ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায় কয়েক হাজার ছাগল হাটে উঠেছে। শত শত বেপারি বাইরে থেকে ছাগল কিনতে গেছেন। তারা ঘোরাফেরা করছেন। দরদাম করছেন। ছাগল পছন্দ করছেন। দর-দামে মিলে গেলে গাড়িবোঝাই করে ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দূর জেলায়। নগদ কেনাবেচা। কোনো ঝক্কিঝামেলা নেই বললেন ক্রেতা বিক্রেতারা।
ছাগল মালিক মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের জয়নাল আবেদিন (৫৮) জানান, এবার ২০টা ছাগল বিক্রি করবেন হাটে। প্রতি ঈদের তিনি নিজ বাড়িতে পালন করা ছাগল বিক্রি করেন ঈদ মৌসুমে কোরবাণীর জন্য। চট্টগ্রামের ছাগলের ব্যাপারি ফজলুল হক জানান- এ জেলার ছাগলের মাংসের স্বাদ এবং গন্ধ একেবারেই ভিন্ন। তাই চাহিদাও বেশি। লাভও ভালো হয়। এবার ব্লাক বেঙ্গল জাতের এক হাজার ছাগল কেনার ইচ্ছের কথা শোনান।
বারাদী হাটের ইজারাদার ই¯্রাফিল হোসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে শুধু এই হাট থেকেই এবার ৬০ হাজার ছাগল বিক্রির টার্গেট রয়েছে। প্রতি হাটে অন্তত তিন হাজার ছাগল বিক্রি হয়।
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান ,প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল লালন-পালনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ পশুটি বছরে চারটি বাচ্চা দেয়। যতœ নিয়ে লালন-পালন করতে পারলে কৃষকেরা ভালো লাভ পায়। তিনি জানান এবার কোরবাণীর জন্য মেহেরপুর জেলায় ৫৯ হাজার ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল তৈরী আছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১-০৪/নূসী