আমি আবারো ক্রিকেট খেলবো কি-না জানতাম না : স্মিথ

235

বার্মিংহাম, ২ আগস্ট ২০১৯ (বাসস) : টেস্ট ক্রিকেটে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হলো অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের। বল টেম্পারিং-এর দায়ে এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই সেঞ্চুরি করলেন তিনি। কঠিন এক পরিস্থিতি অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই নিজের ব্যাটিং কারিশমা দেখান স্মিথ। ১২২ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর টেল-এন্ডারদের নিয়ে অসাধারন লড়াই করেছেন তিনি। সাথে পেয়েছেন ৬৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৪তম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির ইনিংসে ১৪৪ রানে আউট হন স্মিথ। তাঁর এই অনন্য সাধারন ইনিংসের সুবাদে ২৮৪ রানের ভালো একটি সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের প্রথম দিন শেষে সংবাদ সস্মেলনে এসে আবেগে-আপ্লুত হয়েছিলেন স্মিথ। তিনি বলেন, ‘এত বড় ঘটনার আমি আবারো টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে পারবো, তা জানতাম না।’
২০১৮ সালের মার্চে কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বল টেম্পারিং-এর জড়িত থাকার দায়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন স্মিথ। তার সাথে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বল টেম্পারিং করা ক্যামেরন ব্যানক্রফট নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন নয় মাসের।
নিষেধাজ্ঞা, লজ্জার পরও ভেঙ্গে পড়েননি ওয়ার্নার-স্মিথ-ব্যানক্রফটরা। সাহস রেখেছেন। নিষেধাজ্ঞার মাঝেও ক্রিকেটের প্রতি সম্মান-ভালোবাসা একটুকুও কমেনি তাদের। তাই নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই দ্বাদশ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে যান ওয়ার্নার-স্মিথ। সুযোগ পেয়ে নিজেদের প্রমানের জন্য অস্থির হয়ে উঠেন ওয়ার্নার-স্মিথ। ওয়ার্নার ভয়ংকর রুপ দেখালেও, স্মিথ মোটামুটি ভালো পারফরমেন্সই করেন। ওয়ার্নার ১০ ইনিংসে ৬৪৭ রান ও স্মিথ ৩৭৯ রান করেন।
বিশ্বকাপে ওয়ার্নারের মত আহামরি পারফরমেন্স করতে না পারলেও, টেস্টে নিজেকে উজার করে দিতে মুখিয়ে ছিলেন স্মিথ। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই বড় চমক দেখিয়েছেন তিনি। স্কোরবোর্ডে ১২২ রান উঠতেই আট ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেন। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের যাওয়া-আসা দেখেছেন স্মিথ। তারপরও মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি তিনি।
শেষ দুই ব্যাটসম্যান পিটার সিডল-নাথান লিঁও’কে নিয়ে ১৬২ রান যোগ করেন স্মিথ। তিনি নিজে স্বাদ নিয়েছেন সেঞ্চুরির। সিডল করেন ৪৪ ও লিঁও করেন অপরাজিত ১২ রান।
এমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পুরনো স্মৃতিকে মনে করতে ভুল করেননি স্মিথ। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ মাস এমন সময় ছিলো যে, আমি জানতামই না আর কখনও ক্রিকেটে ফিরতে পারবো। এক পর্যায়ে এজন্য ভালোবাসা হারিয়েছি। পাশাপাশি কনুইয়ের অস্ত্রোপচারের পর হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এমন পরিস্থিতি সত্যিই উদ্ভট। তবে সবকিছু যখন আবারো ঠিক হলো, আমি অনেক ভালোবাসা পেলাম। আমি জানি না কেমন করে সব হলো, তবে আবারো ভালোভাবে ফিরতে মুখিয়ে ছিলাম। আমি খেলতে চেয়েছিলাম। আমি মাঠে যেতে চেয়েছি এবং অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চেয়েছি। আমি মনে করি, মানুষকে গর্বিত করতে পেয়েছি এবং সকলের যা পছন্দ তা করতে পেরেছি।’
আবারো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পেরে খুশী স্মিথ। তিনি আরও বলেন, ‘এই ম্যাচের মত ভালোবাসা আমি এর আগে এমন অনুভব করিনি, যা এখানে ছিলো। ভাগ্যক্রমে এই ভালোবাসা ফিরে এসেছে এবং এই অবস্থায় আসতে পেরে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। আমি আবারো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে পেরেছি এবং যা আমি পছন্দ করি।’
প্রায় ১৭ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছেন স্মিথ। ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিরলেও, টেস্ট নিয়ে বড় ধরনের চিন্তায় ছিলেন তিনি। কারন এই টেস্ট ফরম্যাট দিয়েই তো ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্মিথ। দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নামার আগে কি পরিকল্পনা ছিলো স্মিথের, ‘সত্যিই বলতে কি করতে হবে তা আমি জানতাম না। দীর্ঘদিন পর এমন মূর্হুত এসেছিলো, তবে আমি ঠিক যে আমি জানতাম না। সত্যি বলতে এসময় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেই সেঞ্চুরি পেয়ে কেমন অনুভূতি স্মিথের, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্যিই আমি গর্বিত যে দলের মহাবিপদের সময় সহায়তা করতে পেরেছি। অবশ্যই প্রথম দুই সেশনে ইংল্যান্ড দারুন ব্যাটিং করেছে। তারা পরিশ্রম করেছে অনেক। তবে আমি গর্বিত যে, দলের কঠিন সময়ের মুখে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি এবং লড়াই করতে সক্ষম হয়েছি ও ভালো সংগ্রহ এনে দিতে পেরেছি।’
এই সেঞ্চুরিকে অন্যতম সেরা শতক বলছেন স্মিথ, ‘আমার মনে হয়, এটিই আমার অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি। অবশ্যই অ্যাশেজের প্রথম টেস্টর সকালে খেলাটা কঠিন ছিলো, তাই অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক ডেলিভারিতে আমাকে পরাস্ত হতে হয়েছে, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছি এবং পরের বলের জন্য মনোনিবেশ করেছি। আমি জানি, অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সহজে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিতে চাইনি। আমি লড়াই করতে চেয়েছি এবং ভাগ্যক্রমে আমি তা পেরেছি।’