বাসস ক্রীড়া-১৭ : ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ দিয়ে শুরু হচ্ছে টেস্ট বিশ্বকাপ

700

বাসস ক্রীড়া-১৭
ক্রিকেট-অ্যাশেজ
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ দিয়ে শুরু হচ্ছে টেস্ট বিশ্বকাপ
বার্মিংহাম, ৩১ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী লড়াই অ্যাশেজের ম্যাচ দিয়ে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। পাঁচ ম্যাচ অ্যাশেজ সিরিজের প্রথটিতে কাল মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এ ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেট নতুনভাবে পথচলাকে জয় দিয়ে স্মরনীয় করে রাখতে চায় দু’দল। বার্মিংহামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হবে অ্যাশেজ টেস্টের প্রথমটি।
১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম। মেলবোর্নে ঐ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ৪৫ রানের জয় দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেছিলো অসিরা। এরপর আরও সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলে দু’দল। প্রাচীন কালের ঐ ম্যাচগুলোতে জমজমাট লড়াই করেছে উভয়েই ।
তবে ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট লন্ডনের কেনিংটন ওভালে একটি দু’দিনের ম্যাচে অংশ নেয় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। ঐ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে অলআউট হয় অসিরা। জবাবে ১০১ রান তুলে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ফলে ৩৮ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেনি অসিরা। ১২২ রানে ইনিংস শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার। ফলে ম্যাচ জয়ের জন্য ৮৫ রানের টার্গেট পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু এই রান স্পর্শ করতে পারেনি ইংলিশরা। মাত্র ৭৭ রানে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেলে ৭ রানে অবিস্মরনীয় এক ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ড এমন লজ্জার পরাজয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেদেশের গণমাধ্যম। ফলে ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্যা স্পোর্টিং টাইমস’ তাদের প্রতিবেদনে জাতীয় দলের ক্রিকেট সম্পর্কে লিখে- ‘১৮৮২ সালের ২৯ আগস্ট ইংলিশ ক্রিকেটকে চিরস্মরনীয় করে রাখলো ইংল্যান্ড। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা এমন লজ্জা মেনে নিয়েছে। ইংলিশ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে প্রদান করেছে।’
এরপর ঐ সফরে কিছু নারী দর্শক ইংল্যান্ড অধিনায়ককে কিছু ছাই স্তুপাকারে প্রদান করে। পাত্রে রক্ষিত ছাই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের মৃত্যুস্বরূপ প্রতীকী অর্থেই দেয়া হয়েছিল। আর সেখান থেকেই আসে ‘অ্যাশেজ’ নাম-এর সূূত্রপাত হয়। ইংরেজিতে ‘অ্যাশেজ’ এর বাংলা অর্থ ‘ছাই’ বা ‘ভস্ম‘।
আর ঐ ম্যাচ থেকেই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ পায় ‘অ্যাশেজে’র নামকরন। ১৮৮২-৮৩ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় অ্যাশেজ সিরিজ। আগের ম্যাচে লজ্জার হারের পরই ঘুড়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। অ্যাশেজের প্রথম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ইংল্যান্ড। এরপর থেকেই ‘এ্যাশেজ’ নামে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ শুরু করে।
তবে এবারের অ্যাশেজ সিরিজটি পাচ্ছে অন্যরকম এক মর্যাদা। কারন ওয়ানডে-টি২০ ফরম্যাটের জমজমাট যুগে টেস্ট ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তোলার পরিকল্পনা করছে আইসিসি। আগামী দু’বছরের জন্য টেস্ট ক্রিকেটকে নিয়ে নতুন নকশা কষে আইসিসি। শুরু করছে প্রথমবারের মত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ বা টেস্ট বিশ্বকাপ। ১ আগস্ট ২০১৯ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৭টি সিরিজে ৭১টি টেস্ট খেলবে ৯টি দল। ৩০ এপ্রিল ২০২১-এর শেষে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল লর্ডসে টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল।
এমন সব নতুনত্বের মধ্যে নিজেদের জমজমাট লড়াইটা বেশ ভালোভাবেই করবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কারন সদ্যই দ্বাদশ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছে ইংল্যান্ড। প্রথমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করা ইংল্যান্ড বেশ ফুরফুরা মেজাজেই রয়েছে ।
তবে ইংল্যান্ডকে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলো আয়ারল্যান্ড। অ্যাশেজ সিরিজকে সামনে রেখে আয়ারল্যান্ডের সাথে লর্ডসে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অংশ নেয় ইংল্যান্ড। নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮৫ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ২০৭ রান করে প্রথম ইনিংসে লিড নেয় ইংলিশরা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। ৩০৩ রান করে আয়ারল্যান্ডকে ১৮২ রানের টার্গেট দেয়। সেই টার্গেটে মুখ থুবড়ে পড়ে আয়ারল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের দুই পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও ক্রিস ওকস আইরিশদের ব্যাটিং লাইন-আপকে দুমড়ে মুচড়ে দেন। মাত্র ৩৮ রানেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। লর্ডসের ইতিহাসে এটিই সর্বনি¤œ রান। আর ১৪৩ রানের আত্মবিশ্বাসী জয় তুলে নিয়ে টগবগে হয়ে উঠে ইংল্যান্ড।
তাই অ্যাশেজের শুরু থেকে নিজেদের সেরাটা দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে ইংল্যান্ড। এমনটাই বললেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট, ‘আমরা দল হিসেবে দারুন এক অবস্থায় আছি। সতীর্থদের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ বিরাজ করছে। এর একটি কারন, কিছুদিন আগেই আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি। দলের অনেকেই টেস্ট ফরম্যাটে আছে। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ধরনের পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে আমাদের। সেই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কিভাবে উৎরে যেতে হয়, সেটি রপ্ত করে পেরেছে দল। অ্যাশেজে যে ধরনের পরিস্থিতি হোক-না কেন ম্যাচ জয়ের জন্য নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে আমরা প্রস্তুত।’
কাফ ইনজুরির জন্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে খেলতে পারেননি দলের সেরা পেসার জেমস এন্ডারসন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরছেন তিনি। তবে দুর্ভাগ্য নতুন বলে চোটে থাকা জোফরা আর্চারকে সাথে পাচ্ছেন না। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ে আর্চারের ভূূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মত। শেষ মূর্হুতে দলে সুযোগ পেয়ে নিজে জাত চিনিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্ম নেয়া আর্চার। ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট। অথচ বিশ্বকাপের আগে সেরাদের ধারে কাছেও ছিলেন না আর্চার।
ইংল্যান্ডের মত ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। কারন ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছে তারা। লিগ পর্বে দ্বিতীয়স্থান নিয়ে সেমিফাইনালে উঠে তারা। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি অসিরা। তবে বিশ্বকাপের ৬/৭ মাস আগে যে অবস্থয় ছিলো অস্ট্রেলিয়া। তাতে বিশ্বকাপে অসিদের এমন পারফরমেন্স প্রশংসার। কারন বল টেম্পারিং-এ টালমাটাল ছিলো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায় অসিরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে লিগ পর্বে তাক লাগানো পারফরমেন্সই করে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার দলের পারফরমেন্সে দিকে সবার চোখ যতটা না ছিলো, তার চেয়ে বেশি ছিলো স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের দিকে। কারন বল টেম্পারিং-এর দায়ে এক বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন তারা। বিশ্বকাপ দিয়ে আবারো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিরেন স্মিথ-ওয়ার্নার। বিশ্বকাপে কেমন ছিলো স্মিথ-ওয়ার্নারের পারফরমেন্স?
১০ ইনিংসে ৩টি করে সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৪৭ রান করেন ওয়ার্নার। ৪টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১০ ইনিংসে ৩৭৯ রান করেন স্মিথ। তাই টেস্ট ক্রিকেটেও নিজেদের প্রমানের কাজটা বেশভালোভাবেই করবেন বলে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের মেন্টর ও সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। তিনি বলেন, ‘স্মিথ-ওয়ার্নার পেশাদার খেলোয়াড়। তারা জানে, কিভাবে পারফর্ম করতে হয়। বিশ্বকাপে সেটি দেখেছি আমরা। টেস্টেও স্মিথ-ওয়ার্নার ভালো করবে আমি আশাবাদি।’
আগামী ছয় সপ্তাহ দু’দলের সকল খেলোয়াড়কে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করেন ওয়াহ। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামী ছয় সপ্তাহ কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে দু’দলের খেলোয়াড়দের। দারুন এক উত্তেজনাকর সিরিজ হবে। কোনভাবেই এই সিরিজের ভবিষ্যবানী করা যাচ্ছে না, কোন দল জয় নিয়ে সিরিজ শেষ করবে।’
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক। ১০ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। করেছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড ছিলো। ওয়ানডের মত অ্যাশেজ সিরিজেও ভালো করতে মুখিয়ে আছেন স্টার্ক, ‘ওয়ানডের ফর্ম আমাকে আত্মবিশ্বাসী করছে। তবে এটি টেস্ট ম্যাচ। তাও আবার অ্যাশেজ সিরিজ, ইংল্যান্ডের মাটিতে। অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তবে আমি ভালো পারফরমেন্স করতে মুুখিয়ে আছি।’
বাসস/এএমটি/২২০০/স্বব