বাজিস-৪ : মাগুরায় এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় গত ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন

203

বাজিস-৪
মাগুরা-উন্নয়ন
মাগুরায় এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় গত ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন
মাগুরা, ২২ জুন, ২০১৮ (বাসস) : দ্বিতীয় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) প্রকল্পের আওতায় মাগুরার ৩৬টি ইউনিয়নে গত ৫ বছরে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের তৃণমূল মানুষ এর সুফল ভোগ করছে। যা পল্লী অঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণসহ ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালীকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত গ্রামের এলাকার কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিং হওয়ায় মানুষ এখন সহজেই যাতায়ত করতে পারছে। মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ভাবন পাড়ার ওহাব শিকদারের বাড়ি থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৬৫ মিটার কাঁচা রাস্তা ইটের সলিং দিয়ে তৈরি হওয়ায় ওই গ্রামের মানুষ সহজেই যাতায়ত করতে পারছে।
ভাবনপাড়া গ্রামের মজিদ মন্ডল, মানিক মন্ডল, সমশের মোল্যা,তবিজউদ্দিন বিশ^াসসহ অনেকে জানান, কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিং হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরা সহজেই যাতায়ত করার পাশপাশি ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। এ জন্যে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারা
বিনোদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বর কাদের আলী বিশ^াস বলেন, এলজিএসপি-২ পকল্পের আওতায় বিনোদপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন হওয়ায় গ্রামের তৃণমূল মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের কোদলা গ্রামে গঙ্গা-কপেতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের খালের উপর এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যায়ে ২১.৬০ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট চওড়া ব্রীজ নির্মাণ হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে এলাকাবাসী । কোদলা গ্রামের শাহিদুল শেখ, মোছলেম মোল্যা, কবির হোসেনসহ অনেকে জানান, ব্রীজটি নির্মিত হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই আনা নেয়া করতে পারছেন। এছাড়া ব্রীজ সংলগ্ন কোদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতে পারছে। কোদলা ওয়ার্ডের মেম্বর আনোয়ার সর্দার জানান, ব্রীজটি নির্মিত হওয়ায় অত্র এলাকার মানুষের যাতায়ত অনেক সহজ হয়েছে। পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ৫৫০টি পরিবার উপকৃত হচ্ছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় গত ৫ বছরে জেলার চার উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে স্কানার, প্রিন্ট মেশিন, লেমিনেটিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরাহ করায় জনগনের দোর গোড়ায় তথ্য প্রযুক্তি সেবা অব্যাহতভাবে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ও মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা পরিচালক নাসরিন সুলতানা ও পার্থ সারর্থী মজুমদার জানান, এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় আমাদের সেন্টারে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করায় সেবা দেয়া আমাদের জন্য সহজ হচ্ছে। আমরা অনলাইনে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কৃষি তথ্য সেবা, জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, পর্চার আবেদন, পল্লী বিদ্যুৎ বিল জমা নেয়া, মোবাইল ব্যাংকিং, ভিসা চেকিংসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান সহজেই গ্রহণ করছেন এলাকাবাসী।
একইভাবে গত ৫ বছরে জেলার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ^ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এলজিএসপি-২ প্রকল্প কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে জন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আত্ম কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনসহ উপকরণ ক্রয় ও মেরামত ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন গ্রামে এসব কাজ শেষ হওয়ায় গ্রামীণ যোগাযোগ সহজতর হওয়ার পাশাপাশি এসব অঞ্চলের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, এ সকল কাজের মধ্যে গত ৫ বছরে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মোট সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১ হাজর ৬০১টি কাঁচা রাস্তায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২১৪ মিটার ইটের সলিং নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে ৩ হাজার ৬৪ টি নলকুপ স্থাপন, কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬ হাজার ২৮৯ টি রিং স্লাব, ১ হাজার ৪১ টি পাইপ ও বক্স্র কালভার্ট নির্মাণ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের জন্য ৮২টি উপকরণ ক্রয় ও মেরামত ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ৫ বছরে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আত্ম কর্মসংস্থান বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে এলাজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় যে বরাদ্দ এসেছে তা যথাযথ ভাবে কাজে লাগোনো হয়েছে। জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, কৃষির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় প্রশাসন এ কাজের মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে।
বাসস/ সংবাদদাতা/১৬১৫/মরপা