বাসস দেশ-৬ : বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকার তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

132

বাসস দেশ-৬
এনামুর-সংবাদ সম্মেলন
বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকার তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : ভবিষ্যতে বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকার তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
আজ রোববার সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এনামুর রহমান বলেন, ‘পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। আল্লাহ না করুক, বন্যা যদি দীর্ঘায়িতও হয়, ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। ভবিষ্যতে বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও আমরা তা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।’
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যাকবলিতদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত সবাই ত্রাণ চান না। বেশিরভাগই বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ এবং দুর্যোগ সহনীয় বাংলাদেশ চান। যারা ত্রাণ চান, তারা দরিদ্র। তাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কাজেই বন্যায় সবাই ত্রাণ পান না, এমন অভিযোগ সঠিক নয়।’
বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৬ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব মিলিয়ে বন্যার্তদের জন্য ৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হবে তিন হাজার ৯০০ বান্ডেল টিন। এছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে বরাদ্দ করা চাল ও শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র তদারকি, পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ, চলাচলে সহযোগিতাসহ সব দিকে সবধরনের মনিটরিং সর্বক্ষণ ছিলো। সরকারি সব ধরনের ছুটি বাতিল করে বন্যা মোকাবিলায় কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার ২৮টি জেলা, ১৬৩ টি উপজেলা, ৪৯ টি পৌরসভা ও ৯৬১ টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৬ হাজার ৫৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৭টি পরিবার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ জন।
তিনি বলেন, বন্যায় বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৭৫ জন। এর মধ্যে শিশু ৫৬ জন। সব মিলিয়ে সারাদেশের ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গবাদি পশু-পাখি মারা পড়েছে ২২ হাজার ৪০০। ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪ হাজার ৮৯৭টি। সারাদেশের আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে মোট এক লাখ ৭৪ হাজার ৬৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ জানান, আগামী ১০ দিনে বড় ধরনের বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই। বঙ্গোপসাগরে যে তিন নম্বর সর্তক সংকেত দেওয়া রয়েছে, তা আস্তে আস্তে তুলে নেয়া হবে। আসাম, নেপাল, মেঘালয় থেকে পানি আসার আশংকা কম। তাই অনবরত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে এখনো দেশের নদ-নদীর ১৩টি পয়েন্ট বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাবে। বর্তমানে যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র, কুশিয়ারা সুরমা নদ- নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। ভারি বন্যা না হলে এসব নদ-নদীর পানি দ্রুত নেমে যাবে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি বইছে। এসব পয়েন্টে পানি ১-২৭ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। শনিবার ১৭টি ও তার আগের দিন ২১টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে ছিল। গাইবান্ধা ও জামালপুরের পানি নামতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। আগামী দুই সপ্তাহর মধ্যে বড় ধরনের বন্যার কোনও আশংকা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যা দেখা দেয়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজার, নেত্রকোণা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর।
এ সময়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
বাসস/এএসজি/বিকেডি/১৪৫০/এমএবি