নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে নেমেছে ভোলা ও বরগুনার জেলেরা

212

ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : সাগরে সব ধরণের মৎস্য শিকারের উপর টানা ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে নেমেছে ভোলা ও বরগুনা জেলেরা। এ ব্যাপারে ভোলা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাত ১২টার পর থেকেই জাল ও ফিশিং বোট নিয়ে সাগরের দিকে ছুটছেন জেলেরা। আবার অনেকে গতকাল সকালের দিকে রওনা হয়েছেন। ইলিশের মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা না মিল্লেও গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ছে জেলেরা । তাদের প্রত্যাশা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগের চেয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সাগরে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই আড়ৎদাররাও তাদের আড়ৎ নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন। নতুন করে আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন ইলিশ বিক্রির জন্য। আবার কোন কোন ঘাটে সোমবার বিকেলে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী আড়ৎদাররা মাছ কেনার জন্য ভিড় জমিয়েছেন।
ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের জংশন ঘাট থেকে সাগরে মাছ শিকার করা জেলে মোঃ মঞ্জু জানান, আমার ফিশিং বোটে এ ঘাট থেকে আমিসহ ১০ জন জেলে সাগরে শিকার করতে প্রতি নিয়ত যাই। গত ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাড়িতে বেকার ছিলাম। ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখন আমরা সাগরে মাছ শিকার করে ধার-দেনা পরিশোধ করবো।
দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর এলাকার জেলে মোঃ মোস্তফা জানান, এবছর নদীতে এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছেনা। এছাড়া বিভিন্ন সময় থাকছে অভিযান। এবার প্রথমবারের মত সরকার সাগরে মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা তা মেনে সাগরে মাছ শিকার করতে যায়নি। এখন অভিযান শেষ রাতে সাগরে মাছ শিকার করতে যাবো।
অন্যদিকে সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে ভোলা জেলা প্রাশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, সাগরে যেসব জেলেরা মাছ শিকার করতে যায় আমরা তাদের তালিকা তৈরি করছি। তারা সাগরে যাওয়ার আগে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়ে নিরাপত্তার জন্য ফাই জ্যাকেট ও বয়া নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ একেএম আজাহারুল ইসলাম জানান, সাগরে সব সময় মাছে থাকে। এখন জেলেরা সাগরে নিয়ে অনেক মাছ শিকার করতে পারবে বলে প্রত্যাশা তার।
উল্লেখ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২২ জুলাই রাত ১২ টা পর্যন্ত সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ দিন অলস কাটিয়ে আবারও সাগরে যাচ্ছে জেলেরা। অনেক জেলে আবার মঙ্গলবার দুপুরেই সাগরের উদ্দেশ্যে ট্রলার ভাসিয়েছেন। তবে এ বছর উপকূলের জেলেরা স্বতস্ফুর্তভাবে ৬৫ দিনের আইন মেনে চলেছেন।
প্রান্তিক জনপদ বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী, আমতলীর জেলে পল্লীগুলোর জেলেরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই সাগরে যাওয়ার সব প্রস্তুতি স¤পন্ন করেছেন তারা ।দীর্ঘদিন কর্মহীন অবস্থায় থাকার পর জেলে পাড়ায় আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এবার বেশি মাছ পাবেন বলে আশাবাদী জেলেরা।
জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ স¤পদের ভান্ডার সুরক্ষায় চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞারোপ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞারোপের সফলতাকে অনুসরণ করে বঙ্গোপসাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিস¤পদের ভাণ্ডন্ডারের সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।