চাঁদপুরে পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন ৫ গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি

251

চাঁদপুর ,২২ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২ দিন ধরে পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে এ ইউনিয়নে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
ভাঙ্গনের কবলে ইতিমধ্যে রাজারচর, মান্দের বাজার, খাসকান্দি, লগ্মীমারাচর, দেওয়ান বাজার এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার বসত ভিটাহীণ হয়ে গেছে এবং এসব এলাকার বেশ কয়েকটি অংশ ভেঙ্গে যায়। ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলো ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি, মাঝেরচর, গোয়াল নগর, রায়েরচরসহ বিভিন্ন উঁচু এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মাটি ধস অব্যাহত থাকায় ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে আরো শত-শত ঘর-বাড়ি।
হঠাৎ উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি পদ্মা ও মেঘনা নদী দিয়ে নেমে যাওয়ার ফলে নদীতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়। যার ফলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে এ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। শনিবার রাত থেকে ওই এলাকায় ভাঙন ব্যাপক আকারে শুরু হয়। পদ্মার ভাঙনে এ পর্যন্ত ২ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে-মাটি হারানো পরিবারগুলোর মাঝে চলছে আহাজারি। আবার আতঙ্কিত অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার কাজে।
ভাঙন কবলিত মান্দের বাজার এলাকার খালেক ছৈয়াল জানান, জোয়ার শেষে ভাটা শুরুর সময়টাতেই ভাঙন বেশি দেখা দেয়। শনিবার সকালে ভাঙন অল্প আকারে শুরু হলেও রাতে এর তীব্রতা বাড়ে। আমরা চাই আমাদের ভিটে রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এলাকার ভাঙন ঠেকাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী বেপারী জানান, উজান থেকে প্রবল বেগে বন্যার পানি চাঁদপুের মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হওয়ায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চর এলাকায় মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে প্রচন্ড ঢেউ এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। যার কারণে নদী এবার বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে নদী ব্যাপক আকারে ভাঙ্গছে। এ পরিস্থিতিতে ইউনিয়নের রাজারচর, মান্দের বাজার, খাসকান্দি, লগ্মীমারাচর, দেওয়ান বাজার এলাকার প্রায় ২ শতাধিক পরিবার বসতঘর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
ওই এলাকার নদীর তীরবর্র্তী বাকী অংশগুলোও ভাঙ্গনের আশংকায় রয়েছে তাই আমরা ঘর বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। আমরা ঘর বাড়ি ভাঙ্গনের শিকারকৃত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। তাদের যতটুকু সহযোগিতা তা করার জন্য চেষ্টা করব। তিনি বিষয়টি সংশ্লি­ষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেন বলে জানান।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা জানান, চাঁদপুরে কয়েকদিন ধরে পদ্মা-মেঘনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছরেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে রাজরাজেস্বর ইউনিয়নে ভাঙ্গন দেখা দেয়। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য চেষ্টা করছি। গতকালের জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে কাজ করছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, আজ ও ৪.১ সে: মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ঐ অংশগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দেয়, তবে নদীর স্রোত সেখানে বেশি হওয়ায় কোন ব্যাবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। চাঁদপুরের শহর রক্ষা বাধেঁর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ও ৫৩/৫৪ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলে বাধঁ মজবুত করা হয়েছে। আরো জিও ব্যাগ মজুদ করে রাখা হয়েছে, আপদকালীন সমেয়ের জন্য।