বাজিস-১ : নাটোরে গরু-মহিষের সৌখিন খামার গড়েছেন রেকাত আলী

290

বাজিস-১
নাটোর-গরু-মহিষের খামার
নাটোরে গরু-মহিষের সৌখিন খামার গড়েছেন রেকাত আলী
নাটোর, ২০ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : বিভিন্ন দেশের আকর্ষণীয় গরু আর মহিষের সমাহারে সৌখিন খামার গড়ে তুলেছেন রেকাত আলী। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী খামারে থাকা ৬৮টা গরু আর পাঁচটা মহিষ দেখতে ভিড় করছেন, হচ্ছেন মুগ্ধ। নাটোর সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকাতে বৈচিত্রময় এ খামারের অবস্থান।
পেশায় চাল ব্যবসায়ী রেকাত আলীর বরাবরই ঝোঁক ছিল বাড়ীতে গরু পালন করার। তিন বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন হৃষ্টপুষ্ট কার্যক্রম। নিজস্ব রাইস মিলের চারপাশ জুড়ে গড়ে তুলেছেন গরুর আবাসন, অদূরেই ঘাসের খামার।
খামারের মালিক দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন জাতের বিদেশী গরু। এরমধ্যে রয়েছে আমেরিকার বাহামা, অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান, নেপালের নেপালী বলদ, পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরুর উচ্চতা দেশি গরুর চেয়ে বেশি । ওজনে কোন কোনটি এক টন ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার বাহামা অগ্রগামী। ১৬টা রাজস্থানের রাজকীয় সিং অসাধারণ। নেপালের জাতটির গায়ের রঙ তো খানিকটা হরিণের মত। সব গরুই শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির। তাই এসব গরুর কাছে গেলে আদর পেতে গলা বাড়িয়ে দিচ্ছে গরুগুলো। খামার মালিকের সাথে গরুগুলোর সখ্যতা চোখে পড়ার মত।
এ খামারের নতুন সংযোজন পাঁচটি বিহারী জাতের মহিষ। একই আকৃতির আকর্ষণীয় এসব মহিষ ওজনে পাঁচ মণ ছাড়িয়েছে।
বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে এসব গরু দেখার কৌতুহল নিয়ে খামারটি পরিদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা বললেন, গরুর খামার যে দর্শনীয় হতে পারে তা এ খামারে এসে বুঝলাম। দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ঘাস খেতে দিচ্ছিল গরুকে। ফিরে যাওয়ার তাগাদা দিতে বাবা-মাকে বললো, আরেকটু থাকি। গরুগুলোর সাথে অল্প সময়ের দেখাতেই মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছে যেন !
শুধু কুরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করেই নয়, সারা বছর ধরে এ খামারে কিছু না কিছু গরু থাকেই। গরুর পরিচর্যার জন্যে নিয়োজিত আছেন সাতজন কর্মচারী। তাদের দলনেতা বুলবুল আহমেদ জানান, গরুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, অসুস্থতার দিকে নজর রাখাসহ সব কাজই আমরা করি। রাতে দুইজন সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে। কর্মচারীদের মধ্যে তিনজন আবাসিক হওয়ায় তাদের পরিবারবর্গও আমাদের কাজে সহযোগিতা করে। অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এ খামারের ব্যাপারে জানা গেল, গোবর হওয়ার সাথে সাথেই সরিয়ে নেওয়া হয়। আর তাই গরুগুলোর ত্বক ঝকঝকে।
খামারের অদূরেই ১২ বিঘার খামারে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের প্রয়োজনীয় ঘাস। নেপিয়ার, গোমা জাতের ঘাসছাড়াও আছে থাইল্যান্ডের পানচুন ঘাস। খামারের গরুগুলোর চাহিদা মিটেয়ে অন্য গরু প্রতিপালনকারীরা বিনা অর্থে এ খামারের ঘাস, বীজ পেয়ে থাকেন বলে জানা গেল। এলাকায় দাতা হিসেবে পরিচিতির কারণেই সম্ভবত এ সুবিধা পান তাঁরা।
কোরবানীর হাটে তোলার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে খামারে ভিড় করছেন। সাদেক এগ্রো, বেঙ্গল ফার্ম ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেল। রাইস মিলের পাশাপাশি গরুর খামার অত্যন্ত লাভজনক বলে জানালেন রেকাত আলী।
বৈচিত্র আনতে এবারের ঈদে মহিষগুলোকে কুরবানী করবেন রেকাত আলী। আর গরুগুলোর বেশীরভাগটাই বিক্রি করবেন। বিক্রির পর্যায় শুরু হয়েছে। খুব শিঘ্রী খামারের বেশীরভাগ জায়গা খালি পড়ে থাকবে। ওদেরকে বিদায় দেয়া খুব কষ্টের বলে জানালেন রেকাত আলী। আবেগতাড়িত রেকাত আলী বলেন, গরুর খামার আমার পেশা নয়, অনেকটা নেশার মত। হাজারো ব্যস্ততার ভিড়ে প্রতিদিন ওদের সাথে দেখা না হলে স্বস্তি হয়না। গরুগুলোর সাথে যেন আমার আতœার সম্পর্ক, তা ছিন্ন করা খুব সহজ কাজ নয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রেকাত আলী বলেন, পরিসর আরো বাড়াবো। একটা বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলতে চাই।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বেলাল হোসেন বাসসকে বলেন, রেকাত আলীর সমৃদ্ধ খামার নিয়ে আমরা গর্বিত। খুব শিঘ্রী ইডকলের কারিগরি সহযোগিতায় তাঁর খামারে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরীর পদক্ষেপ নেওয়া হবে- যার উৎপাদিত জ্বালানিতে আলোকিত হবে খামার আর চলবে রাইস মিল!
বাসস/সংবাদদাতা/১০২২/নূসী