সুপরিকল্পিত বনায়নে পরিচ্ছন্ন বরিশাল নগরীর পরিবেশ

259

॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৫ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : সুপরিকল্পিত বনায়ন ও সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বরিশালের বায়ু ুদূষনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হৃাস পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকার পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ পরিচ্ছন্ন বরিশাল নগরীর পরিবেশ।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবেশ সুরক্ষায় নগরীর ৩০টি খালসহ জেলার অন্যান্য খাল ও নদী উদ্ধার ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে কীর্তনখোলা নদীতে ড্রেজিং করে নদীর পানির স্বাভাবিক গতি রক্ষা করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্র্ণ জেল খাল, লাকুটিয়া খাল, কাশিপুর খাল, সাগরদী খাল, ভাটার খাল উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক। দখলকৃত এসব খাল উদ্ধার ও খালের পারে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খালগুলো দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে দুই পাশে সীমানা নির্ধারণ করে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় নগরীর একাধিক রাস্তার দুই পাশে ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে সেখানে বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবেশ সুরক্ষায় বনায়নের প্রয়োজনীয়তা রক্ষায় জেলার হিজলা উপজেলার চরমেঘায় ২ হাজার ২’শ ৫৪.৮ একর জমিতে বনায়নের জন্য বৃক্ষরোপণ ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার রাস্তার দুই ধারে প্রায় ২৫ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বায়ু দুষন রোধে জেলার প্রায় অর্ধ-শতাধিক ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগন। এসময় ইটভাটার মালিকদের নগদ অর্থদন্ড জরিমানাসহ কারাদন্ড দেয়া হয়েছে এবং ছাড়পত্র না থাকার কারনে ১৭ টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, পরিবেশ সুরক্ষায় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জব্দ করছে অবৈধ পলিথিন। যে কারণে বাড়ছে সচেতনতা, কমছে পলিথিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বনভূমির বিস্তার ২০০৫-০৬ সালের ছিল শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ হার বেড়ে শতকরা ১৭ দশমিক ৪৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে এ হার আরো বাড়ছে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র।
এবিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, বরিশাল নদী বিধৌত এলাকা। তাই নদী রক্ষায় নিয়মিত ভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে তাৎক্ষণিক ভাবে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরিবেশ দুষনকারী ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বর্তমান সরকারের তৎপরতা দৃশ্যমান।
অপরদিকে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন পরিবেশ সুরক্ষায় ৩০ টি ওয়ার্ডের বাসা-বাড়ির বর্জ্য ও উচ্ছিষ্টাংশ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন এনে দিনের পরিবর্তে রাতে বর্জ্য পরিষ্কার করেছেন। ফলে দূর্ঘন্ধমুক্ত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন এলাকা।
সিটি কর্পোরেশন ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাজী আখতারুজ্জামান হিরু বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ, ডাস্টবিন স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।
এব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব দুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্ল­াস্টিক সামগ্রী ও পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার পরিবেশের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। এগুলো ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ না করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। এদূুষণ থেকে নগরীকে মুক্ত রাখার জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে ৩ হাজার পরিবেশ বান্ধব ছোট ছোট প্লাস্টিকের অস্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে।