বাসস ক্রীড়া-১০ : ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২৪১ রান

323

বাসস ক্রীড়া-১০
ক্রিকেট-বিশ্বকাপ-ফাইনাল
ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২৪১ রান
লর্ডস (লন্ডন), ১৪ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ২৪২ রানের টার্গেট দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেটের ‘মক্কা’খ্যাত লর্ডসে আজ প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড।
টস ভাগ্যটা ভালোই বলা চলে নিউজিল্যান্ডের। ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস জিতেছিলো কিউইরা। টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৭ উইকেটে ম্যাচ হেরেছিলো নিউজিল্যান্ড। আজকের ফাইনালেও টস লড়াইয়ে জয় পায় কিউইরা। এবারও প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় নিউজিল্যান্ড। তবে এই টস জয় নিউল্যিান্ডের জন্য বিপদই বটে। কারণ লর্ডসে আগের চার ফাইনালে যারাই টস জিতেছে তারাই ম্যাচ হেরেছে। তবে নিউজিল্যান্ড এবার নতুন ইতিহাস লিখতে পারে কিনা সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সে যাই হোক, বৃষ্টির কারণে প্রায় ১৫ মিনিট পর শুরু হওয়া ম্যচে ব্যাট হাতে নেমে ভালো শুরুর পথেই হাটচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ৬ ওভারে ২৮ রান সংগ্রহ করেন তারা। তবে সপ্তম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকস। নিজের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে ১৯ রান গাপটিলকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন ওকস। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন গত আসরে এক ইনিংসে বিশ্ব রেকর্ড ২৩৭ অপরাজিত থাকা গাপটিল।
অফÑফর্ম ওপেনারকে হারানোর পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার নিকোলস ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শুরুতে সতর্কতা অবলম্বন করেন তারা। তবে দ্রুতই উইকেটে সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন এ জুটি।। ২২তম ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। তখন রান রেট সাড়ে ৪ এর সামান্য বেশি।
দলকে শতরানে পৌঁছে দিয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় বিশ্বকাপ এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া উইলিয়ামসনকে। তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়োইন মরগানের রিভিউতে আউট হন তিনি। ইংল্যান্ড পেসার লিয়াম প্লাংকেটের বলে উইকেটের পেছনে জশ বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৫৩ বল মোকাবেলায় ২টি চারে ৫৩ বলে ৩০ রান করেন তিনি। ৯৮ বল মোকাবেলা করে এই জুটি যোগ করেন ৭৪ রান।
উইলিয়ামসন আউট হওয়ার সময় অন্যপ্রান্তে হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন নিকোলস। পরবর্তীতে হাফ-সেঞ্চুরি তুলেও নেন তিনি। কিন্তু অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি নিকোলস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ও এবারের আসরের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে শেষ পর্যন্ত ৫৫ রানে থেমে যান তিনি। প্লাংকেটের বলে বোল্ড হবার আগে ৪টি চারে নিজের ৭৭ বলের ইনিংসটি সাজান নিকোলস।
১০৩ ও ১১৮ রানে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থায় দলের হাল ধরার দায়িত্ব বর্তায় দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান অভিজ্ঞ রস টেইলর ও উইকেটরক্ষক টম লাথামের। দায়িত্ব পালনের জন্য সর্তকতা অবলম্বন করেন তারা। দেখেশুনে জুটি বড় করার চেষ্টা করেন টেইলর ও লাথাম। কিন্তু তাদের পথে এবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। কোন বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি ছাড়া ৩১ বলে ১৫ রান করা টেইলরকে এলবিডব্লু করেন উড। দলীয় ১৪১ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় টেইলরকে।
এ অবস্থায় জেমস নিশামকে নিয়ে প্রতিআক্রমনের চেষ্টা করেন লাথাম। ইংল্যান্ড বোলারদের উপর চড়াও হবার চেষ্টা করেন এ জুটি। যাতে উল্টো চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ডের বোলাররা। চাপে পড়েও গিয়েছিলো স্বাগতিক বোলাররা। বলের সাথে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন লাথাম-নিশাম। তবে ৩৯তম ওভারের শেষ বলে নিজের ভুল শটে আউট হয়ে যান নিশাম। প্লাংকেটের ডেলিভারিটি মিড-অনের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ৩০ গজের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটকে ক্যাচ দেন নিশাম। ৩টি চারে ২৫ বলে ১৯ রান করে প্লাংকেটের তৃতীয় শিকার হন নিশাম।
৩৯তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৭৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন নিশাম। বাকী ১১ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান কোথায় পৌঁছায় সেটিই ছিলো দেখার ছিলো। বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যাওয়ায় দলকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দেয়ার পরিকল্পনা কষেন লাথাম ও সাত নম্বরে নামা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এজন্য ওভার প্রতি ছয় করে রান তুলতে থাকেন তারা। এমন অবম্থায় ২শ পেরিয়ে আড়াইশ’র স্বপ্ন দেখছিলো নিউজিল্যান্ড। কিন্তু গ্র্যান্ডহোমকে থামিয়ে দিয়ে এই জুটির স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দেন ওকস। ২৮ বলে ১৬ রান করেন গ্র্যান্ডহোম। লাথামের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৭ বলে ৪৬ রান যোগ করেন গ্র্যান্ডহোম।
একই ওভারে ফিরে যান লাথামও । ফলে আড়াইশ’ রান স্পর্শ করার শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৬ বলে ৪৭ রান করেন লাথাম। তাকে ফিরিয়েছেন ইংল্যান্ডের পেসার ওকস। এরপর ইনিংসের বাকী ৯ বলে ৯ রানের বেশি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪১ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ওকস ৩৭ রানে ও প্লাংকেট ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড
নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং :
মার্টিন গাপটিল এলবিডব্লু ব ওকস ১৯
হেনরি নিকোলস বোল্ড ব প্লাংকেট ৫৫
কেন উইলিয়ামসন ক বাটলার ব প্লাংকেট ৩০
রস টেইলর এলবিডব্লু ব উড ১৫
টম লাথাম ক ভিন্স (অতি) ব ওকস ৪৭
জেমস নিশাম ক রুট ব প্লাংকেট ১৯
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ক ভিন্স (অতি) ব ওকস ১৬
মিচেল স্যান্টনার অপরাজিত ৫
ম্যাট হেনরি বোল্ড ব আর্চার ৪
ট্রেন্ট বোল্ট অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-১২, নো-১, ও-১৭) ৩০
মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৪১
উইকেট পতন : ১/২৯ (গাপটিল), ২/১০৩ (উইলিয়ামসন), ৩/১১৮ (নিকোলস), ৪/১৪১ (টেইলর), ৫/১৭৩ (নিশাম), ৬/২১৯ (গ্র্যান্ডহোম), ৭/২৩২ (লাথাম), ৮/২৪০ (হেনরি)।
ইংল্যান্ড বোলিং :
ক্রিস ওকস : ৯-০-৩৭-৩ (ও-৪, নো-১),
জোফরা আর্চার : ১০-০-৪২-১ (ও-৫),
লিয়াম প্লাংকেট : ১০-০-৪২-৩,
মার্ক উড : ১০-১-৪৯-১ (ও-২),
আদিল রশিদ : ৮-০-৩৯-০ ,
বেন স্টোকস : ৩-০-২০-০ (ও-২)।
বাসস/এএসজি/এএমটি/২০১৫/মোজা/স্বব