ইংল্যান্ড:রোড টু ফাইনাল

423

ঢাকা, ১৩ জুলাই, ২০১৯(বাসস): গত ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হওয়া আইসিসি দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর্দা নামছে আগামীকাল ১৪ জুলাই লর্ডসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালের মাধ্যমে। গত ৯ জুলাই প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠে বর্তমান রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ১১ জুলাই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
সর্বশেষ ১৯৯২ আসরে নিজ মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দ্বিতীয়বারের মত আবারো নিজ মাঠে ফাইনাল খেলতে নামছে ইয়োইন মরগানের নেতৃত্বাধীন দলটি।
রোড টু ফাইনাল:
ম্যাচ-১: ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের জয়:
লন্ডনে প্রায় কানায় কানায় পুর্ন দর্শকদের উপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে গত ৩০ মে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টোর গোল্ডেন ডাক সত্বেও জেসন রয়, জো রুট, অধিনায়ক ইয়োইন মরগান ও বেন স্টোকসের হাফ সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান করে ইংল্যান্ড। এরপর প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামা জোফরা আর্চারের ২৭ রানে ৩টি এবং এরপর বেন স্টোকস ও লিয়াম প্লানকেটের দুটি করে উইকেট শিকারে ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচ-২: ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তানের কাছে ১৪ রানে পরাজিত
বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক দিন আগে ওয়ানডে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত করা পাকিস্তানের কাছে ১৪ রানে হার মানে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের ৩৪৮ রানের জবাবে জো রুট এবং জস বাটলারের জোড়া সেঞ্চুরি সত্বেও ধুকতে হয়েছে মরগানের দলকে। ৭৫ বলে বাটলারের সেঞ্চুরিসহ ১৭.৩ ওভারে ওপেনিং জুটিতে ১৩০ রান করে স্বাগতিকরা। কিন্তু সাদাব খান ও ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯ উইকেটে ৩৩৪ রান পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। ১৪ রানে জয় পায় পাকিস্তান।
ম্যাচ-৩: কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৬ রানের জয়
সোফিয়া গার্ডেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। ১২১ বলে রয়ের ১৫৩ রানের সাথে বেয়ারস্টো ও রুটের হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে শেষ দিকে লিয়াম প্লানকেটের( ৯ বলে অপরাজিত ২৭ রান) ঝড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান করে ইংলিশরা। এরপর সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি(১২১ রান) সত্বেও আর্চার-স্টোকসের তিনটি করে উইকেট শিকারে ২৮০ রানে থামে বাংলাদেশ।
ম্যাচ-৪: সাউদাম্পটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ উইকেটের হয়
রোজ বোল-এ আর্চার(৩/৩০) ও মার্ক উডের(৩/১৬) বোলিং নৈপুন্যে জয়ের জন্য ২১৩ রানের টার্গেট পায় ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে ফিল্ডিংয়ের সময় রয় ইনজুরিতে পড়ায় তার পরিবর্তে ইনিংস ওপেন করতে নামা রুটের ৯৪ বলে অপরাজিত ১০০ এবং প্রমেশন পেয়ে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে ক্রিস ওকসের ৪০ রানে ৩২ ওভারেই ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।
ম্যাচ-৫: ওল্ড ট্রাফোর্ডে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয়
বিশ্ব রেকর্ড ১৭টি ছক্কাসহ মরগানের দানবীয় সেঞ্চুরিতে ম্যানচেস্টাওে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় পায় ইংল্যান্ড। বেয়ারস্টো(৯০) এবং রুপ(৮৮) সেঞ্চুরি মিস করলেও আফগান বোলারদের তুলোধুনা করে ৭৭ বলে ২০৮.৪৫ স্ট্রাইক রেটে ১৪৮ রান করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এরপর মঈন আলীর ৯ বলে অপরাজিত ৩১ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৯৭ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড। এরপর এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলারের স্বীকৃতি পাওয়া উড ও আর্চারের তান্ডবে ৫০ ওভাওে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রানে থামে আফগান ইনিংস।
ম্যাচ-৬: হেডিংলিতে শ্রীলংকার কাছে ২০ রানের পরাজয়
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় বিস্ময় শ্রীলংকার কাছে ইংল্যান্ডের ২০ রানের পরাজয়। লাসিথ মালিঙ্গার চোখ ধাধানো এক স্পেলেই ম্যাচের চিত্র বদল যায়। এক স্পেলে রুট ও বাটলারসহ মালিঙ্গার ৪৩ রানে ৪ উইকেট শিকারে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। শ্রীলংকার করা মাঝারি মানের ২৩২/৯ সংগ্রহের বিপক্ষে ২১২ রানে অলআউট হলে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় পরাজয়ের মুখ দেখে ইংল্যান্ড। অবশ্য ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফব্রেক বোরিংয়ে মাত্র নয় বলে ৩ উইকেট হারানোও স্বগতিকদের পরাজয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। অফব্রেক
ম্যাচ-৭: লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৪ রানের হার
শ্রীলংকার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছেও পরাজিত হওয়ার পর ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল খেলা নিয়েই সন্দেহ সৃস্টি হয়। জয়ের জন্য ২৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জেসন বেহরেনডর্ফ ও মিচেল স্টার্কের কাছে আত্মসমর্পন করে ইংল্যান্ড। পেস জুটি ৯ উইকেট শিকার করেন। স্টোকস ৮৯ রান করে আশা বাঁচিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত স্টার্কের ইয়র্কারে তাকে হার মানতে হয়।
ম্যাচ-৮: এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ৩১ রানের জয়
সেমিফাইনালে যেতে একটি জয় দরকার এবং ভারতকে হারিয়ে সে আশা বাঁচিয়ে রাখে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি এবং রয়ের(৬৬) সাথে ১৬০ রানের জুটি গড়েন বেয়ারস্টো। এরপর ৫৪ বলে স্টোকসের ৭৯ রানের ভর করে ৩৩৮ রান করে ইংল্যান্ড। এরপর কেএল রাহুলকে শুন্য রানে বিদায় করলেও রোহিত শর্মা(১০১) ও বিরাট কোহলি(৬৬) হতাশা ছড়িয়েছেন ইংল্যান্ড শিবিরে। তবে প্লানকেটের তিন উইকেট শিকার ইংলিশদের ম্যাচে ফেরাতে সাহায্য করে এবং ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে থামে ভারত।
ম্যাচ-৯: ডারহামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রানের জয়
বেয়ারস্টোর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি(১০৯) এবং রয়ের(৬০) সঙ্গে ১২৩ রানের ওপেনিং জুটি ১৯৯২ আসরের পর প্রথমবার স্বাগতিকদের ফাইনালে ওঠায়। তাদের ব্যাটে ভার করে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করে ইংল্যঠহু। এরপর কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলরের রান আউটে পথ হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানে থামে কিউই ইনিংস।
সেমিফাইনালÑ এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয়
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২৭ বছর পর প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। শুরুতেই দুটিসহ ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ওকসের ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার এবং আদিল রশিদের ৩ এবং আর্চারের ২ উইকেট শিকারে ৪৯ ওভাওে ২২৩ রানে আটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর জেসন রয়ের ৬৫ বলে ৮৫,বেয়ারস্টোর ৩৪, রুটের অপরাজিত ৪৯* এবং মরগানের ৪৫* রানের সুবাদে ৩২.১ ওভারে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।